ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, প্রয়োজনে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাবেন, কিন্তু যাওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্মানজনক অবস্থায় দেখে যেতে চান। আগেও তাকে তাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন চলে গেলেও সান্ত্বনা থাকবে যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে দাবিদারদের সময়েই তিনি বিদায় নিলেন।
‘আপনাদের যদি সমস্যা হয়, তাহলে আমি থাকবো না, চলে যাবো। তবে যাওয়ার আগে দেখে যেতে চাই, আপনারা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন: এর আগেও এখান থেকে আমাদের তাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা হয়েছে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা সেটা করেছে। এখন চলে গেলেও সান্ত্বনা থাকবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে দাবিদারদের সময়েই চলে গেলাম।
ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিবাদ সমাবেশে আবেগময় বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক জাফর ইকবাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-বিরোধী আন্দোলনরত ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ এই সমাবশের আয়োজন করে।
সমাবেশে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, এর আগে আপনাদের কর্মসূচিতে আমি কখনো আসিনি। কারণ সবসময় বলা হয়, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছি। রাজনীতি করছি। তাই আপনাদের দাবির প্রতি সমর্থন থাকলেও আমি আসতাম না। কিন্তু যখন শিক্ষকদের উপর হামলা করা হলো তখন আর বসে থাকতে পারলাম না।
জাফর ইকবাল বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে সুবর্ণ সময় এখানে কাটিয়েছি। আমার জীবনের সবচেয়ে উৎপাদনশীল সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেটেছে। তাই যখন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়টা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তখন খুব কষ্ট লাগে। এখন বুড়ো হয়ে গেছি, আর সহ্য করতে পারি না।
উপাচার্য-বিরোধী চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা বোকাদের আন্দোলন। এর মতো বোকাদের সমাবেশ আর নাই। ক্লাস পরীক্ষা সবকিছু ঠিকঠাক মতো নেওয়া হচ্ছে; আবার আন্দোলনও হচ্ছে- এদেশে এভাবে কখনো দাবি আদায় হয় না। এমন অহিংস আন্দোলন কর্মসূচি দেখে মহাত্মা গান্ধিও লজ্জা পেতেন।
‘অথচ এই আন্দোলন কর্মসূচির বিরুদ্ধেই ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের উপর হামলা করা হয়েছে,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকরা ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন। তবে সব বিভাগের পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত ছিলো। কর্মবিরতি শেষে তারা মিছিল ও সমাবেশও করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় মিছিল। সমাবেশে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’-এর নেতারা বক্তব্য রাখেন।
রোববার সকালে ভিসি-বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ব্যানার কেড়ে নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। হামলায় অধ্যাপক মো. ইউনুছসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। লাঞ্ছিত হন ড. জাফর ইকবালের স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন হক।