আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাস শনাক্তের ৫০৫তম দিনে এসে নতুন এক বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। এ দিন সর্বোচ্চ মৃত্যুর (২৪৭) পাশাপাশি রোগী শনাক্তেও (১৫ হাজার ১৯২) নতুন রেকর্ড হয়েছে। তার মানে এর আগে কখনো করোনাভাইরাসে এত মৃত্যু আর শনাক্ত দেখেনি দেশের মানুষ।
এমন এক ভয়াবহ দিনকে দেখে স্বভাবতই আতঙ্কিত দেশের মানুষ। কিন্তু কয়েকদিন আগেই এই খারাপ পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে গত ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত চলমান ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ যখন তুলে নেয় সরকার; তখনই তার বিরোধিতা করেছিল জাতীয় কমিটি।
সরকারকে তাদের পরামর্শ ছিল, সেই ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরও ১৪ দিন বাড়াতে। না হলে পরিস্থিতি আরও আশঙ্কাজনক হবে। শুধু জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিই নয়, দ্রুত বাড়তে থাকা সংক্রমণের চিত্র দেখে সামনের দিনগুলোতে ‘করুণ পরিস্থিতি’র তৈরি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
কিন্তু এসব সতর্ক বার্তা গায়ে মাখেনি সরকার। শুধু সরকারের কথা বলছি কেন? মানুষও তখন পাত্তা দেয়নি এসব কথায়। বরং সামাজিক দূরত্ববিধি এবং স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কোটি মানুষকে আমরা ছুটতে দেখেছি গ্রামের দিকে। তার পরিণতি আজ খুব ভয়াবহ হয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
এখন দেখার বিষয় সামনের দিনগুলোতে কোথায় গিয়ে ঠেকে এই লাগামহীন সংক্রমণ? তবে পরিস্থিতি দেখে ধারণা করা যায়, সত্যিই সামনে খুব খারাপ সময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। কেননা সবকিছুরই একটা সীমা থাকে। যে সীমা অতিক্রম করলে, ছাড় না পাওয়াই স্বাভাবিক। তাও আবার সেটা যদি হয় বারবার রূপ বদলানো করোনাভাইরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আমরা মনে করি, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেসব পরামর্শ দিয়েছিল- তা অনুসরণ করা উচিৎ ছিল সরকারের। তবে এটাও ঠিক ‘বিধিনিষেধ শিথিলে’র আগে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় সবকিছু বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ কষ্টে ছিলেন। হয়তো তাদের কথা বিবেচনা করেই তা শিথিল করা হয়েছিল?
তারপরও সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষের জীবন। সেই জীবন রক্ষার জন্যই তো মানুষের এত আয়োজন। সেই জীবনকে আগে বাঁচাতে হবে।