স্প্যানিশ ফুটবলের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার ফুটবল উত্তাপটা বহুগুণে বাড়িয়েছিলেন দুই দলের ছয়জন ফুটবলার। মাঠে জুটি গড়ে অবিশ্বাস্য সব কীর্তি গড়ে গত কয়েকটা বছর ফুটবল বিশ্বকে মাতিয়েছে এমএসএন-বিবিসি। বার্সার ত্রিফলা মেসি-নেইমার-সুয়ারেজের বিপরীতে রিয়ালের বেল-বেনজেমা-রোনালদো। যারা সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘এমএসএন’ ও ‘বিবিসি’ নামে।
বার্সেলোনার এমএসএন থেকে একটি তারা খসে গেছে। ক্লাব ছেড়ে রেকর্ড ট্রান্সফার ফি’তে পিএসজিতে পাড়ি জমিয়েছেন এমএসএনের শেষ জন, অর্থাৎ নেইমার। রিয়ালের বিবিসি এখনও অবিচ্ছিন্ন। তবে মাঠে অনেকটাই অনিয়মিত, নিষ্প্রভও। জানুয়ারির দলবদলের বাজারে সেটা বার্সার রাস্তাতেই চলে যেতে পারে বলে অনুমান ক্রীড়া বিশ্লেষকদের।
তবে এমএসএন বা বিবিসির কম্বিনেশন না দেখার হতাশা বেশিদিন আচ্ছন্ন করতে পারবে না ফুটবল সমর্থকদের। এরইমধ্যে বিশ্ব মেতেছে নতুন এক জুটিতে। আগের দুটি জুটি ছিল স্প্যানিশ লিগে। নতুন জুটি জমজমাট ইংলিশ লিগে। রিয়াল-বার্সার পর ফুটবলে জুটির ‘মিথ’ হাজির করেছে আর্সেনাল। অ্যালেক্সান্ডার লাকাজেত্তে, আলেক্সিস সানচেজ এবং মেসুত ওজিল মিলে আলো ছড়াচ্ছেন এমিরেটসে। যাদের এক সঙ্গে বলা হচ্ছে ‘এওএল’।
চলতি মৌসুমেই প্রথমবার আর্সেনালের হয়ে মাঠে নেমেছেন লাকাজেত্তে। আর এ সপ্তাহে এভারটনের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো মাঠে দেখা গেছে এওএল-জুটিকে। প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করেছেন তারা। এভারটনের ঘরের মাঠ গোডিসন পার্কে গানাররা সেদিন ম্যাচ জেতে ৫-২ গোলে। এভারটন ম্যাচই আভাস দিয়েছে, এমএসএন-বিবিসি জুটির পর নতুন একটি জুটির দেখা পাচ্ছে ফুটবলপ্রেমীরা।
এভারটন ম্যাচ দিয়েই ধুঁকতে থাকা আর্সেনালকে কক্ষপথে ফিরিয়েছে এওএল। জুটির তিনজনই ওই ম্যাচে গোল করেছেন এবং দলের বাকি দুটি গোলও তাদের অ্যাসিস্ট থেকে আসে। তিনজনের মধ্যে মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করেছেন ওজিল। ম্যাচে সর্বোচ্চ (৮টি) সম্ভব্য গোলের সুযোগও সৃষ্টি করেছেন এই জার্মান।
ম্যাচ শেষে কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার ওজিলকে নিয়ে বলেন, ‘কোয়ালিটি পাসিংয়ে সে এক অনন্য খেলোয়াড়। এক কথায় অসাধারণ।’ বাকিদেরও প্রায় একই ভাষায় প্রশংসা করেছেন ফরাসির কোচ।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, চলতি মৌসুমের এপর্যন্ত তিন জনের গোল আর অ্যাসিস্ট সংখ্যা সমান। প্রত্যেকেই ছয়টি করে গোলের পাশাপাশি সমানসংখ্যক অ্যাসিস্ট করেছেন। ওজিলের বানানো বলগুলো আবার দারুণ ফিনিশিং দিচ্ছেন সানচেজ ও লাকাজেত্তে।
‘ট্রেনিংয়ে আমরা সবসময়ই নিজেদের কোয়ালিটি প্রদর্শন করি। তাই ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠে আমরা খুব ভাল খেলেছি।’ -নিজেদের বোঝাপড়ার বিষয়টি বোঝাতে এভারটন ম্যাচ শেষে স্কাইস্পোর্টসকে এমনটাই বলেছেন ওজিল।
এভারটন-আর্সেনালের গত ম্যাচটি যারা দেখেননি তাদের উচিত এই ত্রিফলার সামনের সবগুলো ম্যাচ দেখা। কারণ ‘এওএল’র জুটিযাত্রা খুব বেশিদিন ধরে নাও চলতে পারে। কারণ, আর্সেনালের পাঁচজন খেলোয়াড় আছেন যারা জানুয়ারির দলবদলের বাজারে ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল এবং চেলসির মত বিগমানি পার্টির নজরে রয়েছেন। সেই পাঁচজনের অন্যতম আবার এওএল।
আগামী দুই মাস পর ওজিল এবং সানচেজের আর্সেনালে থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত একটি বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। কোচ ওয়েঙ্গার দাবি করেছেন, যদি তারা চুক্তির মেয়ার বাড়াতে রাজি না হন, তাহলে ক্লাব উভয় খেলোয়াড়কে জানুয়ারিতে বিক্রি করবে। তবে এভারটন ম্যাচের ফলাফলই কেবল বিশ্বফুটবলের নতুন এই জুটিকে রক্ষা করতে পারে।