পাকিস্তানের পর এবার কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে ভারত। এরই মধ্যে পাঁচ নেতাকে দেওয়া সব রকম নিরাপত্তা সুবিধা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে আত্মঘাতীয় বোমা হামলার দু’দিন পর রোববার এমন ঘোষণা এলো।
এই পাঁচজন নেতা হলেন অল পার্টিজ হুরিয়াত কনফারেন্স’র দু’টি অংশের একটির চেয়ারম্যান মিরওয়াইজ উমর ফারুক, জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ডেমোক্রেটিক ফ্রিডম পার্টি’র (জেকেডিএফপি) প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট শাবির শাহ, জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট’র (জেকেএলএফ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও জম্মু-কাশ্মীর ডেমোক্রেটিক লিবারেশন পার্টি’র (জেকেডিএলপি) চেয়ারম্যান হাশিম কুরেশি, হুরিয়াত কনফারেন্স’র আরেক অংশ পিপলস ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুভমেন্ট’র প্রধান বিলাল লোন এবং হুরিয়াতের অন্যতম সিনিয়র নেতা আবদুল গনি ভাট।
নতুন এই নির্দেশ অনুসারে, এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া সব ধরনের নিরাপত্তা ও যানবাহন সুবিধা রোববার সন্ধ্যার মধ্যে ফিরিয়ে নেয়া হবে। শুধু তাদের না, অন্য কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাও এ ধরনের কোনো বিশেষ নিরাপত্তা পাবেন না।
এর বাইরেও যদি সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে আর কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে তবে সেগুলোও অবিলম্বে তুলে নেয়া হবে বলে ঘোষণায় বলা হয়েছে।
শুক্রবার পুলওয়ামা জেলার শ্রীনগর-অনন্তনাগ মহাসড়কের ওপর দিয়ে জম্মু থেকে শ্রীনগরে যাচ্ছিল সিআরপিএফ’ এর গাড়িবহর। পথে গোরিপোরার কাছে একটি বাসে ধাক্কা মারে বিস্ফোরক ভর্তি একটি গাড়ি।
এতে অন্তত ৪২ জন ভারতীয় আধাসামরিক সেনা নিহত হয়। আহত হয় আরও অনেকে।হামলার পরপরই এর দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মোহাম্মদ।
ভারতশাসিত কাশ্মীরে দুই দশকের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর ‘বদলা’ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার অভিযোগ পাকিস্তানের মদদে এ হামলা হয়েছে।
ওই হামলার পর শনিবার জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি দলগুলোর জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি বিঘ্নিত করার যে কোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়।
সেসব পদক্ষেপেরই একটি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এই বিশেষ নিরাপত্তা ফিরিয়ে নেয়া বলে মনে করা হচ্ছে।
কেননা ঘটনার পরপরই শ্রীনগরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, পাকিস্তান এবং এর গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে যে ব্যক্তিরা অর্থ সহায়তা নিচ্ছে তাদের সরকারি নিরাপত্তা পাওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।
এর আগে পাকিস্তানকে দেওয়া বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের পণ্যের উপর ২০০ শতাংশ শুল্কও আরোপ করা হয়।
২০১৬ সালের উরি হামলার পর এত বড় হামলার ঘটনা কাশ্মীর উপত্যকায় ঘটেনি। উরি হামলায় শেষ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৯ জনে।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে কাছে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের ২৭ সদস্য নিহতের ঘটনায়ও পাকিস্তানকে দায়ী করে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি।
শনিবার বিশেষায়িত এই সামরিক বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জাফারি অভিযোগ করেন, পাকিস্তান ইরানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জঙ্গি তৈরির কাজ করছে। এজন্য দেশটিকে ‘কড়া মূল্য দিতে হবে’।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর ওপর হামলা চালাতে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দেয়ার অভিযোগ এনে তিনি আরো বলেন, এজন্য দেশগুলোকে ‘পাল্টা পদক্ষেপের’ মুখোমুখি হতে হবে।