বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে আমরা অনেকবারই পড়েছি, হলিউডের ছবিগুলোতে দেখেছি, চালকবিহীন চলছে নজরকাড়া সব অত্যাধুনিক গাড়ি। সেগুলোতে আরোহী হয়তো বলে দিচ্ছে, ‘ওমুক জায়গায় চলো’, আর গাড়ি তা বুঝে নিয়ে আশপাশ দেখেশুনে নিজেই চলে যাচ্ছে গন্তব্যে। কিন্তু বাস্তবে যদি এমন একটা গাড়ি পান?
হয়তো বলবেন আপাতত এ শুধু কল্পনাতেই সম্ভব। কিন্তু না। অটোপাইলটযুক্ত গাড়ি এখন বাস্তব। সুইস গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিনস্পিড নিয়ে এসেছে এর নতুন বিএমডব্লিউ আইএইট মডেলের একটি বিলাসবহুল অনন্য বৈশিষ্ট্যের গাড়ি, যাতে রয়েছে সর্বাধুনিক অটোপাইলট প্রযুক্তি। এর নাম রাখা হয়েছে ‘ইটোস’।
শুধু তাই নয়, অটোপাইলট মোডে চালানোর সুবিধার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে সহায়তার জন্য গাড়িটির রয়েছে নিজস্ব সাহায্যকারী ড্রোন!এর আগে গত অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটি নতুন মডেলের গাড়িটি সম্পর্কে জানালেও সে তথ্য ছিলো খুবই সামান্য। সম্প্রতি বিএমডব্লিউ আইএইট-এর বিস্তারিত তথ্য, ছবি এবং একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে রিনস্পিড।
ইটোস হাইব্রিড স্পোর্টস কারটির রয়েছে ভিন্ন ডিজাইনের বডি এবং চাকা। এর সঙ্গে রয়েছে বিশেষ ছোট্ট সাহায্যকারী ড্রোন অবতরণের জন্য ল্যান্ডিং প্যাড। ভেতরের ডিজাইনও অন্য সব গাড়ির থেকে আলাদা।
অল-হুইল ড্রাইভ ইটোসের রয়েছে দেড় লিটারের তিন সিলিন্ডার বিশিষ্ট গ্যাসোলিন ইঞ্জিন এবং তিনটি ইলেকট্রিক মোটর। সর্বোচ্চ গতিশীল অবস্থায় উজ্জ্বল হলুদ রঙের এই গাড়িটি মাত্র ৪.৪ সেকেন্ডে ০ থেকে ৬২ মাইল প্রতি ঘণ্টা বেগ অর্জন করতে পারে।
নতুন প্রজন্মের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে নির্মিত ইটোস চালক বা চালকবিহীন – দু’ভাবেই চালানো যায়। অটোপাইলট মোডে চালানোর সময় স্টিয়ারিং হুইল ভাঁজ হয়ে ড্যাশবোর্ডের ভেতর ঢুকে যায়। ড্যাশবোর্ডের ওই অংশের ঢাকনায় এবং তার অন্য পাশে রয়েছে দু’টি সাড়ে ২১ ইঞ্চির বাঁকানো আল্ট্রা এইচডি টিভি স্ক্রিন। বিনোদনের কাজে ব্যবহার না করা হলে স্ক্রিনগুলোতে ইটোসের চারপাশে লাগানো ৮টি এইচডি ক্যামেরা থেকে আসা ফিড দেখা যায়।
গাড়িটির সঙ্গে উপহার পাওয়া যাবে একটি বিলাসবহুল পাৎরাভি ট্রাভেলটেক হাতঘড়ি। গাড়ির ড্যাশবোর্ডের ওপরে ঘড়িটি বসানোর জন্য রয়েছে একটি বিশেষ জায়গা। তবে ঘড়িটিতে রয়েছে একটি ভিডিও ক্যামেরা। ফলে গাড়িতে বসে থাকা অবস্থায় আরোহী ভিডিও চ্যাট করতে চাইলে ঘড়িটি ড্যাশবোর্ডে তার নির্ধারিত স্থানে রেখে একে ওয়েবক্যাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।
চালক কখন কী দেখছে, কোন দিকে মনোযোগ দিচ্ছে গাড়ি চালানোর সময়, তা মনিটর করে সেখান থেকে শেখার জন্য ইটোসে রয়েছে চালকের দৃষ্টি ট্র্যাক করার ব্যবস্থা।
হয়তো ভাবছেন, গাড়ির নিজেরই যখন এতোকিছু আছে, তবে তার আর ড্রোন কী দরকার? দরকার আছে। গাড়ির আশেপাশের পরিবেশ, রাস্তা, ভীড় – এসব পর্যবেক্ষণ করা এবং এসব থেকে তথ্য নিয়ে পরবর্তীতে সহজে অটোপাইলটে গাড়ি চালানো শেখার জন্য ব্যবহার করা হবে ড্রোনটি। পাশপাশি অটোপাইলটে চলার সময়ও ওপর থেকে আশপাশে দৃষ্টি রাখার কাজে সাহায্যকারী ড্রোন ব্যবহার করা যাবে।
অব্যবহৃত অবস্থায় ড্রোনটি থাকবে গাড়ির পেছনে তৈরি একটি ল্যান্ডিং প্যাডে। ১২ হাজার এলইডি লাইটযুক্ত প্যাডটি ডিজিটাল ম্যাসেজ বোর্ড হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য সিইএস প্রযুক্তি মেলায় জনসমক্ষে প্রথম আনা হবে ইটোস।