সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ অঙ্গীকার পূরণে এবারের বাজেটেও ধারাবাহিকতা রক্ষা করার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এজন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের নেয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন তিনি। একই সঙ্গে উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের কথা তুলে ধরেন।
এবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের বিপরীতে প্রস্তাবিত বরাদ্দের পরিমাণ মোট ৬ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন: বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনের লক্ষ্যে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণাধর্মী কার্যক্রমকে উৎসাহিত করছি। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ে চলমান বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতার কলেবর বৃদ্ধি করে উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ করেছি। খুলনা, বরিশাল, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারের শাখা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়াও বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজনের কলেবর বৃদ্ধি ও বিষয়ভিত্তিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এসকল আয়োজনে সহযোগিতা করছি।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)-কে একটি সেন্টার অব এক্সিলেন্স ও সেন্টার ফর টেকনোলজি ট্রান্সফার এন্ড ইনোভেশন হিসেবে রূপান্তর করা হচ্ছে। এছাড়া, পারমাণবিক নিরাপত্তার পাশাপাশি পারমানবিক বিকিরণ হতে সুরক্ষার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অবকাঠামো শক্তিশালীকরার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাত প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন: ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর ব্যানারে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ও বহুমুখী ব্যবহার আমাদের অভীষ্ট প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং দারিদ্র্য হ্রাস ও সামাজিক গতিশীলতা বাড়াতে সহায়তা করছে। সামনের দিনগুলোতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা সুসংহত ও টেকসই করার জন্য জিডিপিতে শিল্পখাতের তুলনামূলক অবদান বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে চাই। ফলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরতা আরো বাড়বে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামোর শক্ত ভিত রচিত হয়েছে। তারপরও চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা নতুন অবকাঠামো নির্মাণ ও ইন্টারনেট সেবা সম্প্রসারণের কাজ চলমান রেখেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ৬টি বিভাগ থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৪.৪০৮ জিবিপিএস এবং জেলা থেকে বিভাগ পর্যন্ত মোট ৫.৯২৮ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ প্রদান এবং ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক (ফোরজি- এলটিই) স্থাপনের উদ্যোগ।
সাইবার নিরাপত্তায় নেয়া উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন: দেশব্যাপী বিস্তৃত তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামোর নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়ানোর জন্য সাইবার স্পেস এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক সাইবার ক্রাইম পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিহত করাসহ সকল প্রকার তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন: যুগের চাহিদার সাথে সংগতি রেখে তরুণদের নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করা, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উদ্ভাবিত সামগ্রী ব্র্যান্ডিং ও বাণিজ্যিকীকরণ, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে আমরা ‘উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি। উদ্ভাবনভিত্তিক ব্যক্তি উদ্যোগের বিকাশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে তোলা ও কর্মসংস্থানে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও জানান, সরকারি সেবা সহজীকরণে ইউটিলিটি পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম বা ইউপিপি স্থাপন করা হচ্ছে; উপবৃত্তির টাকা পৌঁছানোর জন্য ২০ লক্ষ ‘মা’ কে দেয়া হচ্ছে টেলিটকের সিম। বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী দ্বীপ মহেশখালীকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ চলছে।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দ্বীপের অধিবাসীদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন হবে। ফলে, শহর ও দ্বীপাঞ্চলের অধিবাসীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবধান কমে আসবে বলে আশা করেন অর্থমন্ত্রী।