তীব্র বন্যায় ভাসছে দেশ। এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের পরিমাণও কম নয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এখনো নেমে যায়নি পানি। তবে পানি থাকা অবস্থায় যেমন বিপর্যস্ত থাকবে বন্যার্ত মানুষগুলোর জীবন, তেমনই বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে অনেকটাই।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যার বলছে, এবছর বন্যায় এখন পর্যন্ত মোট ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১৩৩টি, ক্ষতিগ্রস্ত পৌরসভার সংখ্যা ৪৩টি, ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নের সংখ্যা ৮৫৫টি, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের সংখ্যা ৫৪৬৯টি।
এতগুলো গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১,১৪০,৮৪৯টি, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫০১,৮৭০৬ জন। এরই মধ্যে বন্যার্ত এলাকাগুলোতে বন্যার্তদের জন্য খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বন্যার্ত মানুষগুলোর জন্য বানানো মোট আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৯৮৬টি, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা ৪০২৬৬৯ জন।
এ পর্যন্ত বন্যায় যাতায়াতের অসুবিধা ও স্কুল ডুবে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে মোট ৩১৯৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা ১৪,৭৩৭ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ঘরবাড়ির সংখ্যা ২৪৭,৮২৬টি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলী জমির পরিমাণ ৬১৮,৭০৯ হেক্টর।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এবারের বন্যায় এখন পর্যন্ত না খেয়ে কোনো মানুষ মারা যায়নি। তবে সাপের কামড়ে, সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে বা একা শিশু পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৯৮ জন। নিখোঁজ রয়েছে ১৪ জন।
এছাড়া এরই মধ্যে এসব বন্যাক্রান্ত এলাকায় ১০ হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন চাল, ৩ কোটি ১ লাখ টাকা, ৩০ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান আরো বলেন, এই মুহূর্তে আমরা সবচেয়ে বেশি নজর দিচ্ছি বন্যা প্লাবিত মানুষগুলোকে রক্ষা করার উপর। আর ত্রাণ তৎপরতা ততদিন চলতে থাকবে যতদিন মানুষের দুর্ভোগ থাকবে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, বন্যার পরে বন্যা আক্রান্ত এলাকার সব জায়গায় পানি একসঙ্গে নামে না। একেক জায়গায় একেক সময় নামে। এখনই বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে, আশা করা যায় উত্তরাঞ্চলের পানি ৩-৪ দিনেই নেমে যাবে। পদ্মাতেও পানি কমতে শুরু করেছে। অন্যান্য এলাকাতেও পানি হয়তো ৪/৫ দিনেই কমে যাবে। তবে বলা যায় যে দেশের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে আছে।
প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই তা সত্যি তবে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সতর্কতার বিকল্প নেই বলেই মনে করেন তিনি। বলেন, প্রশাসনের সদস্যদের তো বটেই, সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। তাহলে এরকম দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমানো যাবে।