কৃষককে প্রাধান্য দিয়ে এবারও তাদের কাছ থেকে সরকার সরাসরি ধান কিনবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
শনিবার দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ নিয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে কৃষি ও এর উপখাতগুলোতে সরকারের বরাদ্দ ও বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার জন্য বিভিন্ন সুপারিশ হস্তান্তর করেন কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ।
অনুষ্ঠানে এবারের বাজেটে কৃষকের কোন দিকটাতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে চ্যানেল আই অনলাইনের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে কৃষক থেকে সরাসরি ধান কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সে ধারাবাহিকতায় এ বছরও একই পদ্ধতিতে ধান কেনা হবে। কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে।
কৃষকদের নিয়ে কাজ করা প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ এর প্রশংসা করে মুহিত বলেন, মানুষ আগে মনেই করতে পারতো না যে, তাদের তথ্য জানার অধিকার আছে। এখন তারা সব বিষয়ে জানতে পারছে, বলতে পারছে। ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ সেসব বিষয়ে কাজ করছে। এর সুবাদে প্রান্তিক কৃষকরা এখন মন্ত্রীদের সামনে দাঁড়িয়েও কথা বলতে পারে। তারা সাহস পাচ্ছে। সচেতন হচ্ছে।
কৃষকরা কিভাবে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে শাইখ সিরাজ বলেন, কৃষকরা কষ্ট করে ধান উৎপাদন করে। কিন্তু তারা প্রকৃত মূল্য পান না। মিল মালিকরা ধান ভেজা বা এ জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে কৃষকের কাছ থেকে কম মূল্যে ধান কিনে। এছাড়া যে ভর্তুকি দেওয়া হয় সরকার থেকে সেটাও যায় মিল মালিকের পকেটে। একই ভাবে পোল্ট্রিখাতেও এ ধরনের সমস্যা রয়েছে। পোল্ট্রি খাদ্যে আমদানি শুল্ক তুলে দেয়া হলেও এর সুফল পাচ্ছে না তৃণমূলের উদ্যোক্তা বা কৃষকরা। কারণ কারখানা মালিকরা খোলা বাজারে কম মূল্যে পোল্ট্রি খাদ্য বিক্রি করছে না।
তিনি বলেন, যেখানে একটি একদিনের মুরগির বাচ্চার দাম হওয়ার কথা ছিল ২০ টাকা সেখানে কৃষককে কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এরপর তিন থেকে চার মাস লালন-পালন করে ওই মুরগির কেজি বিক্রি করতে হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এছাড়া মুরগির পেছনে ওষুধ খরচ তো আছেই। এসব বিবেচনা করলে সহজে প্রশ্ন দাঁড়ায়-তাহলে কৃষকের লাভ কোথায়? বাজেটে এসব বিষয়ে নজর দেযা দরকার।
দেশের টেকসই উন্নয়নে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্লু-ইকোনোমি ও গ্রীন ইকোনোমিরি সমন্বয়ে এগ্রো-ইকোনোমি করা যেতে পারে। কারণ কৃষি একটা বড় খাত। আর এগুলোও আাল্টমেটলি কৃষির সাথে সম্পৃক্ত।
কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা স্মরণ করে দিয়ে কৃষি বাজেট নিয়ে ১৩ বছর ধরে কাজ এই উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব বলেন, মৌসুমি ফলসহ কৃষি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেয়া দরকার। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, যখন দেশের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে আসে ঠিক তখনই কিছু ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে ওইসব পণ্য আমদানি করে। তখন বিদেশি পণ্যের বাজারজাতকরণের ফলে দেশি পণ্য মার খায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। অতএব ওই সময়ে আমদানিতে শুল্ক বাড়ালে আমদানি কমবে। এতে দেশিয় পণ্য বাঁচবে।
কৃষি সংক্রান্ত গবেষণা কাজে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে শাইখ সিরাজ বলেন, কৃষকের জমির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কৃষি পণ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে এ বিষয়ে এখনই সরকারকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। একটা সময় দেখা যাবে ৫ তলা, ১০ তলা বাড়ির উপরে মানুষ কৃষি পণ্য উৎপাদন করতে হচ্ছে। সেদিকেই এগুচ্ছে দেশ। সমুদ্রসীমায় বিভিন্ন কৃষি পণ্য যেমন শ্যাওলা উৎপাদন করা যেতে পারে। যেটা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে খুব দামি খাবার হিসেবে পরিচিত।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রনালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ছাড়াও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ছবি: তানভীর আশিক