পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফ দিন দিন গলে যাচ্ছে। কিন্তু বরফ গলার পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকায় বরফ জমছেও একটানা, যা থামানো সম্ভব নয়। এতে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। সোমবার নাসা থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে জানানো হয়, সৃষ্টির পর থেকেই বরফ জমা-গলার একটি অস্থিতিশীল চক্র অ্যান্টার্কটিক এলাকায় চলে আসছে।
২০১৪ সালে কিছু গবেষণা দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার আমুন্ডসেন সমুদ্র অঞ্চলে সমুদ্রের সঙ্গে লাগোয়া বরফ গলতে গলতে এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে, যেখানে সমুদ্রের উষ্ণ স্রোত নিচ থেকে বরফ গলিয়ে দিচ্ছে। এই বরফগলা আর থামানো সম্ভব নয়। ব্যাপারটা খুবই ভীতিকর। কেননা পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকায় এখনও যে পরিমাণ বরফ আছে, তা গললে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ ফুটেরও বেশি বাড়িয়ে দেবে।
নতুন গবেষণায় প্রাপ্ত ফল যেনো এই ভয়টিকেই আরো জোরালো করলো। কেননা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, আমুন্ডসেন সমুদ্র অঞ্চলের সব বরফ গলে গেলে সত্যিই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে সম্পূর্ণ পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা ডুবে যাবে।
নাসার পটসড্যাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের গবেষক জোহানেস ফেল্ডম্যান ও অ্যান্ডার্স লিভারম্যান জটিল এক ধরণের জলবায়ু মডেল ব্যবহার করে বের করার চেষ্টা করেন পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার সম্পূর্ণ বরফ যদি সত্যিই গলে যায় তবে কী হতে পারে। এতে যেমন বরফ গলার ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে, তেমনি দেখা গেছে বর্তমানে সেখানে চলমান প্রক্রিয়াতেও বরফ নতুন করে জমছে। তবে অনেক বেশি জমছে পূর্বভাগে।
লিভারম্যান জানান, ‘গবেষণায় আমরা দেখিয়েছি যে বরফ গলা ও বরফ জমার এই অস্থিতিশীল প্রক্রিয়াকে কোনো কিছুই বাধাগ্রস্ত করছে না। এলাকার আবহাওয়া এবং পরিবেশে যেসব উপাদান উপস্থিত রয়েছে তা এই অস্থিতিশীলতাকে ধীর করতে পারে, এমনকি বন্ধও করে দিতে পারে। কিন্তু উপাদানগুলো তা করছে না।’
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, গত কয়েক দশক ধরে অ্যান্টার্কটিকায় যে পরিমাণ বরফ গলেছে, তার থেকে মোট বরফ জমার পরিমাণ বেশি। তবে এখানে সমস্যা হলো, সমুদ্রের কাছাকাছি পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফ দিন দিন গলে বরফের স্তর পাতলা হয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে ভেতরের দিকে, অর্থাৎ অ্যান্টার্কটিকার পূর্বভাগে বরফ গলার তুলনায় জমছে বেশি। ফলে সমগ্র অ্যান্টার্কটিক ভূ-ভাগ অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা প্রতিনিয়ত আরো অস্থিতিশীল হচ্ছে। একে থামানো সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে অ্যান্টারকটিকার পূর্বাঞ্চল খুব শিগগিরই আগের রূপ ফিরে পেলেও আগামী ৬০ বছরে পশ্চিমভাগ সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা গবেষকদের।