দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লীতে নানা এনজিওর কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সহ কোন সংগঠনই এতটা তৃণমূল ঘনিষ্ট নয় যতটা এনজিও গুলো ঘনিষ্ট। ঋন প্রকল্প,স্বাস্থ্য,শিক্ষা,নারীর ক্ষমতায়ন,সাহায্য প্রকল্প প্রভৃতির মধ্য দিয়ে তারা সর্বস্তরের মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে।এই তৃণমূল ঘনিষ্টতার প্রভাবেই তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা।
দেশব্যাপী এনজিও কর্মী ও সদস্যদের নিয়ে তারা রাজনৈতিক দল গড়ার স্বপ্ন দেখে।প্রশিকার চেয়ারম্যান কাজী ফারুক ও গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি ড.ইউনুস দুটো রাজনৈতিক দল গড়ার চেষ্টা করেছিলেন।একটি ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও অপরটি গ্রামীন শক্তি।কাজী ফারুক দেশব্যাপী প্রশিকার কর্মকর্তা কর্মচারীদের নেতা কর্মী বানিয়ে দল গঠন করে নিবন্ধিতও করেছিলেন।ইউনুস দল গঠনের ডাক ঢোল পিটিয়ে পরে পিছু হটেন।দেশব্যাপী এনজিওরা চলছে নিয়ন্ত্রনহীন,স্বেচ্ছাচারিমূলক প্রক্রিয়ায়।
তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, নিজনিজ কর্মপ্রক্রিয়া, বেতন কাঠামো সবকিছুই তাদের বানানো নিজস্ব রীতিতে চলে।পদ এক সংস্থা ভিন্ন বেতন ভিন্ন।এক প্রকল্পের কমিউনিটি ফ্যাসিলেটেটরের বেতনের সমান আরেক প্রকল্পের নাইট গার্ডের বেতন।কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে যে কোন সময় বেতন কমিয়েও দিতে পারে।এনজিও গুলোর উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত রয়েছে নির্বাহী পরিচালকের নিজস্ব আত্মীয় স্বজন ও পারিবারিক লোকজন।এখানে যোগ্যতা কোন বিষয় নয়।কর্তার ইচ্ছা অনিচ্ছাই সর্বময় যোগ্যতার মানদন্ড।
ব্র্যাক,গ্রামীন ব্যাংক, দুঃস্থ স্বাস্থ কেন্দ্র,আশা,স্বাবলম্বী,পারি,পল্লীবন্ধু ,ব্যুরো বাংলাদেশ ইত্যাদি কত নামের এনজিও যে রয়েছে তার হিসেব নেই।স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টির কথা বলে এনজিও নিবন্ধন নিয়ে তারা চালিয়ে যাচ্ছে সুদী ব্যবসা।আত্মনির্ভর শীলতার নামে নাগরিকদের ঋনগ্রস্থ করে সর্বস্বান্ত করার কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করে চলছে তারা।
অভিনব কায়দায় ঋনগ্রহনকারীদের সাথে প্রকাশ্য জালিয়াতি করে হয়রানির কারন হচ্ছে।প্রতিটি এনজিও ঋন দেয়ার সময় ঋন গ্রহীতার কাছ থেকে ব্ল্যাঙ্ক চেকে সই রেখে দেয়।মানুষ না বুঝে ও ঋনের প্রয়োজনে ভবিষ্যতে কী হবে না ভেবে চেকে সই করে দেয়।পরবর্তিতে এনজিওরা ঋনের কিস্তি আদায়ের জন্য চেকে তাদের ইচ্ছেমত তারিখ বসিয়ে ঋনগ্রহীতার শূন্য একাউন্ট হতে টাকা তুলতে ব্যাংকে যায়।
ব্যাংক বলে একাউন্টে টাকা নেই।এনজিও কর্মকর্তা বলে আমাকে একটা চেক ডিসঅনারের সার্টিফিকেট দেন।এরপর তারা ঋনগ্রহীতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। এভাবেই দেশব্যাপী হাজার হাজার মানুষকে চেক ডিসঅনার মামলায় হয়রান করে চলছে।কিস্তি না দেয়া পর্যন্ত তাদের মুক্তি নেই।চেক ডিসঅনারের মামলায় কত মানুষ যে প্রতারিত হচ্ছে তার হিসেব নেই।এদের স্বেচ্ছাচারিতা ক্রমশ লাগামহীন হয়ে উঠছে।
সরকারের উচিত এনজিও গুলোকে একটা বিধিমালায় পরিচালিত করতে বাধ্য করা । ভূঁয়া তারিখ দিয়ে সহজ সরল মানুষদের এই চেক ডিসঅনারের মামলা দিয়ে হয়রানি প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহন জরুরি।এনজিওতে বিভিন্ন পদে অভিন্ন বেতন কাঠামো,অভিন্ন চাকরির নিয়োগ বিধিমালা ও ঋন প্রদান এবং ঋন আদায়ের অভিন্ন নীতিমালা প্রবর্তন করা হোক।
অনেক এনজিও বিভিন্ন অফিসার পদে নিয়োগ দেয় এই শর্তে যে তার মাসিক বেতন হতে নির্বাহী পরিচালক দশহাজার অথবা বিশহাজার টাকা কর্তন করে রাখবে।এনজিও গুলোর এই সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা অতি দ্রুত প্রতিরোধ করা অতীব জরুরি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)