উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করেছে বৃটিশ পুলিশ। বৃহস্পতিবার লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জামিন শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি ছিল ব্রিটিশ সরকারের। ২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে কূটনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম টেকক্রান্স জানিয়েছে, ইকুয়েডরের সঙ্গে ভাল সম্পর্কের খাতিরে লন্ডনে তাদের দূতাবাসে আশ্রয় পেয়েছিলেন বিশ্বব্যাপী গোপন নথি ফাঁস করে আলোচনায় আসা অ্যাসাঞ্জ। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। পরে অবশ্য এই অভিযোগ থেকে খালাস পান তিনি।
কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের হাতে গ্রেপ্তার এবং গ্রেপ্তারের পর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়ার ভয় সবসময়ই ছিল অ্যাসাঞ্জের। সেই ভয় থেকেই ইকুয়েডরের কাছে কূটনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি।
তবে দীর্ঘ দিন ইকুয়েডরের দূতাবাসে অতিবাহিত হওয়ার পর দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। গত বছর দূতাবাসে ইন্টারনেট লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে দূতাবাসে থেকেই বিভিন্ন দেশের গোপন নথি ফাঁসের হাত আছে তার।
এই ধারণা আরও শক্তিশালী হয় ভ্যাটিক্যান সিটির গোপন নথি ফাঁসের পর। অভিযোগ রয়েছে, উইকিলিকস ভ্যাটিক্যান সিটির যে তথ্য ফাঁস করেছে তার পেছনে অ্যাসাঞ্জের হাত রয়েছে। দূতাবাসে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে পরিচিতজনরা অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাওয়ায় অ্যাসাঞ্জ আবারও এই কাজে যুক্ত হয়েছেন।
এরপর থেকেই ইকুয়েডরের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের সম্পর্ক হালকা হতে থাকে। এরমধ্যে গত বৃহস্পতিবার ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো এক ভিডিও কনফারেন্সে অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
মোরেনো বলেন, অ্যাসাঞ্জের অভদ্র এবং আক্রমনাত্মক আচরণ, ইকুয়েডর এবং বিশেষ করে বৈশ্বিক সম্প্রীতির প্রবাহের বিরুদ্ধে তার প্রতিষ্ঠানের (উইকিলিকস) নেতিবাচক এবং হুমকিমূলক ঘোষণার কারণে আমি ঘোষণা করছি, তিনি আর আশ্রয়ের যোগ্য নন এবং তা আর স্থায়ী হতে পারে না।
তিনি বলেন, ২০১২ সালে অ্যাসাঞ্জের যে কূটনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছিল, সার্বভৌমত্বভাবে ইকুয়েডর তা শেষ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট গত জানুয়ারিতে ভ্যাটিক্যানের নথি ফাঁসের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, অ্যাসাঞ্জের আচরণে আমাদের ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে গেছে। তিনি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করেছেন, দূতাবাসের সিকিউরিটি ক্যামেরা নষ্ট করেছেন, নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন, অনুমতি ছাড়া দূতাবাসের নিরাপত্তা নথি খতিয়ে দেখেছেন, ইন্টারন্টে বন্ধের প্রতিবাদ করেছেন এবং তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে বাইরে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
মোরেনোর মতে, অ্যাসাঞ্জ এখনও উইকলিকসের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্বে তিনি হস্তক্ষেপ করেন।
প্রেসিডেন্ট মরেনোর এই ঘোষণার পর উইকিলিকস আশঙ্কা প্রকাশ করে যেকোন সময় অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। টুইটারে তারা এই আশঙ্কার কথা জানায়।
এরপর আজ লন্ডনের মেট্রোপলিট্রন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তবে ইকুয়েডর ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে অ্যাসাঞ্জকে যেন অন্যকোন দেশের হাতে তুলে দেয়া না হয় যেখানে তাকে নির্যাতন এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ভয় আছে।
উইকিলিকস টুইটারে জানায়, অ্যাসাঞ্জ দূতাবাসের বাইরে আসতে চাননি, ইকুয়েডরের রাষ্ট্রদূত লন্ডন পুলিশকে আমন্ত্রণ জানায় এবং পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তারা জানায়, পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে, অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয় ভঙ্গ করেছে যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
গ্রেপ্তারের পর লন্ডনের মেট্রোপলিট্রন পুলশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে এবং মেট্রোপলিট্রন পুলিশ সার্ভিসের আমন্ত্রণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেন্ট্রাল লন্ডন পুলিশ স্টেশনের কাস্টডিতে তাকে রাখা হয়েছে। ওয়েস্টমিনিস্টার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির করার আগ পর্যন্ত তিনি এখানেই থাকবেন।
পুলিশ আরো জানায়, ওয়েস্টমিনিস্টার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ওয়ারেন্ট বাস্তবায়ন করা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ সার্ভিসের দায়িত্ব। এছাড়া অ্যাসাঞ্জের আশ্রয় প্রত্যাহারের পর ইকুয়েডের দূতাবাসের আমন্ত্রণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী জেনিফার রবিনসন দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
টুইটারে রবিনসন জানান, শুধুমাত্র জামিন শর্ত ভঙ্গের কারণে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিষয়টা এমন নয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যার্পণের অনুরোধ রক্ষা করতেই তাকে গেপ্তার করা হয়েছে।