চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এটা এক ধরনের পাগলামি বলতে পারেন

হাতে বাংলাদেশের মানচিত্রের উল্কি এঁকে অভাবনীয় সাড়া পাওয়া এবং দেশপ্রেমের প্রাবল্য লক্ষ্য করে উচ্ছ্বসিত ‘আমরাই বাংলাদেশ’ কমিউনিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা আরিফ আর হোসেইন তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে হাতে দেশপ্রেমের চিহ্ন ধারণ করার মাধ্যমে মানুষের আবেগকে আলোড়িত করার বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হয়।

আরিফ তার ফেসবুকে লেখেন, এটা এক ধরনের পাগলামি বলতে পারেন। নিউইয়র্ক সিটির একটা দোকানে যেয়ে বললাম, “আমি এটা আঁকবো আমার হাতে”। উনি বললেন, ‘এটা আবার কি?’ আমি বললাম “আমার দেশের ম্যাপ” । উনি সরু চোখে তাকিয়ে রইলেন। তারপর নেট ঘেঁটে দেখলেন, হ্যা এটা আসলেই একটা দেশের ম্যাপ। উনি সুই গরম করতে করতে বললেন, “লেটস ডু ইট দেন”।

পাগলামি শেষ হতে ১৫ মিনিটের বেশী লাগলো না। প্রচন্ড ব্যাথাও পেয়েছি। ব্যান্ডেজ করে দেয়ার আগে বলল, “একটা ছবি তুলি আপনার হাতের?”। পরের দিন যখন ড্রেসিং করতে গেলাম, যেয়ে দেখি দোকানে আমার হাতের ছবি অনেক বড় করে বাঁধাই করে রেখেছে।

এই বুড়ো বয়সে এসে কেনও এই কাজটা করলাম, জানি না। শুধু জানি, কারো সাথে হ্যান্ড-সেইক করতে গেলে, তখন সে যদি আমার হাতে এটা দেখে, আমি নিশ্চিত সে কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে (ইন এ পজিটিভ ওয়ে)। হয়েছেও তাই।

বোর্ডিং পাস নেয়ার সময় নিউইয়র্ক এয়ারপোর্টের মেয়েটা বলল, “আমি আপনাকে ইকোনোমি ক্লাস থেকে বিজনেস ক্লাসে আপগ্রেড করে দিচ্ছি… ও হ্যা প্রাউড টু সি সামওয়ান হু ইজ রিয়েলি প্রাউড অফ হিস কান্ট্রি… ওয়েলকাম অন বোর্ড”।

ঢাকায় এসে পরিচিত যতজনকেই পেয়েছি, হ্যান্ড শেইক করা পর যেন মনে হলো তারা বদলে গেছে। ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমেই এয়ারপোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে দেখা । হ্যাড সেইক করলাম… উনি বললেন, আসেন এয়ারপোর্ট ঘুরিয়ে দেখাই কি কি করেছি আমরা নিজেদের উদ্যোগে। এয়ারপোর্টে ভিতরের হাজত খানা দেখলাম হাজতের বাথরুমও ঘুরে দেখালো। “আরিফ ভাই, এখানে আগে প্যান ছিলো… আমরা কমড বসিয়েছি যেন হাজতিদের কষ্ট কম হয়”। ভাগ্যিস উনি বলেনি, “এখানে বসেন, আপনার একটা ছবি তুলি”।

সব শেষ করে গাড়িতে উঠার আগে তার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এক সৈনিক যে ব্যাগ ধরে হাঁটছিল, তাকে বখশিশ দিতে গেলাম, নিলো না… শুধু বলল, ‘স্যার মানচিত্র আঁকা হাত থেকে টাকা নেই কেমনে? দোয়া করবেন’।

দেশে আসার পর থেকেই সবার সাথেই হ্যাড সেইক করে যাচ্ছি। আজ সকালে অফিসের কাজে রাজউক গেলাম… একজনকে স্পিড মানি না দিলে সে কাজ করবেই না। গত ৩ মাস থেকে ঘুরাচ্ছে। সে আড় চোখে অনেকক্ষণ আমার হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর ফাইলটা দিয়ে বলল, ‘নেন আপনি আর আসা লাগবে না’।

হ্যা জানি যে এটা কোনও যাদুর কাঠি না যে, সব পরিবর্তন করে দিবে। তবে বিশ্বাস রাখতে চাচ্ছি। যদি আমার এই বিশ্বাস ভুল হয়, তাহলে ধরে নিব প্রথম লাইনটাই ঠিক; “এটা এক ধরনের পাগলামি বলতে পারেন”।