সামগ্রিকভাবে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী জনগণের মধ্যে ১১ দশমিক ১ শতাংশ ব্যবহারকারী খুবই সন্তুষ্ট। আর ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যবহারকারী সন্তুষ্ট নয়। তবে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সরকারের নেয়া পরিকল্পনায় ৭৯ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ আস্থাশীল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জনমত জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ জরিপের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন বিবিএসের আইটি বিভাগের প্রকৌশলী সিএস রায়।
বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাংলাদশ জ্বালানী ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (ইপিআরসি) সহযোগিতায় মুঠোফোনের মাধ্যমে বিবিএস এই জরিপ পরিচালনা করে। ২০১৬ সালের অক্টোবরের প্রথম ১০ দিন ও ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির ১০ দিন নিয়ে মোট ২০ দিনে এই জরিপ করা হয়। মুঠোফোনের মাধ্যমে বিবিএসের ২৪ জন নারী গণনাকারী ও ৫ জন সুপারভাইজার এই তথ্য সংগ্রহ করে। তথ্যের জন্য বিটিআরসি থেকে ৬টি টেলিফোন অপারেটরের ১ লাখ ২১ হাজার ৪২৭ জন গ্রাহকের একটি তালিকা নিয়ে সেখান থেকে ১৯ হাজার ৬শ জন বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর সাক্ষাতকার নেয়া হয়। এই তালিকায় দেশের সব উপজেলার গ্রাহকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এতে বলা হয়, বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপারে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবহারকারী ১১ দশমিক ১ শতাংশ খুব সন্তুষ্ট, ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ সন্তুষ্ট আর ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ মোটামুটি সন্তুষ্ট। কিন্তু ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যবহারকারী সন্তুষ্ট নয়।
তবে শীতকাল ও গ্রীষ্মকালে এই হারে পার্থক্য দেখা গেছে। গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী জনগণের মধ্যে বিদ্যুতের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় খুবই সন্তুষ্ট ৯ দশমিক ২ শতাংশ, ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩১ শতাংশ মোটামুটি সন্তুষ্ট আর ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ অসন্তুষ্ট।
সন্তুষ্টির তালিকাকে এলাকা ভেদেও ভাগ করে দেখানো হয়েছে জরিপের ফলাফলে। এতে দেখা গেছে, খুলনা বিভাগের সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যবহারকারী খুবই সন্তুষ্ট। তবে চট্টগ্রাম বিভাগে এ হার সর্বনিম্ন। এখানে এই তালিকায় রয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
এতে আরো বলা হয়, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৪ দশমিক ৮ শতাংশ আর সর্বনিম্ন রংপুর বিভাগে ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ।
জরিপে বিদ্যুতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উত্তর দাতাদের মধ্যে বিভিন্ন শিল্প-কারখানার উত্তরদাতা ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, সেচ কাজের ১২ দশমিক ২ শতাংশ, অন্যান্য ব্যবসার ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ আর ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা কোনো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত নন।
জরিপে বলা হয়, প্রায় ১২ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ রান্নার কাজে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তবে এ হার পল্লী এলাকায় ৭ শতাংশ, পৌর এলাকায় ২০ শতাংশ আর সিটি কর্পোরেশনে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মানুষ কতটা আস্থাশীল এমন প্রশ্নও করা হয় বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের নিয়ে করা ওই জরিপে। এ বিষয়ে আস্থাশীল ৭৯ দশমিক ৭ শতাংশ আর আস্থাশীল নয় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যবহারকারী।
সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, আগামী ৩ বছরে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। ‘ভিশন ২০২১’ অর্জনে বিদ্যুৎ বিভাগকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল, তার চেয়ে আরো ২ হাজার মেগাওয়াট বেশি উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সরকারের ‘২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ পৌঁছে দেয়ার ওয়াদা পূরণ হবে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে আরো ৪ হাজার ৪২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। নতুন ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এই বাড়তি বিদ্যুৎ আসবে। গত ৯ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের যে বিনিয়োগ হয়েছে, তা সরকারি-বেসরকারি উভয় খাত থেকেই হয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও তাই হবে।
সচিব আরো বলেন, বর্তমানে ক্যাপটিভসহ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মোট সক্ষমতা ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট। যা থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৫০৭ মেগাওয়াট। কেবল পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যাই ২ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, এই জরিপের উদ্দেশ্য ছিল সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণ কি ভাবছে তা জানা। গত ৯ বছরে দেশের ৯০ ভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। এখন কাজ চলছে মানসম্মত সেবা দেওয়ার।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক প্রমুখ।