এখন তো আর সামনে ভোট নাই, তাই পাবলিকরে মারনের বুদ্ধি করছে কারেন্ট আর পানির দাম বাড়াইয়া। এখন কি ভোটের চিন্তা করা লাগে? এমনি-এমনি ভোট হইয়া যায়। ভোটকেন্দ্রে কেউ যায় এখন? দুই ব্যক্তির এই কথোপকথন চলছিল পত্রিকা স্ট্যান্ডে। ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালবেলা।
তবে পত্রিকা বিক্রেতা আস্তে করে বলল, সরকার যা করে ভালোই করে। ঘরে যাইয়া পড়েন গা। এখানে এই আলাপ কইরেন না। বিপদ আপদের কোনো মা বাপ নাই।
দেশের সব কটি দৈনিক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম-বিদ্যুত আর পানির দামের খবর। মানুষের জীবনযাপনের খরচ কতটা বাড়ল-সেটা একেক পত্রিকা একেকভাবে উপস্থাপন করেছে। পাশাপাশি গত কয়েক মাস ধরে যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে সেটার খবরও ছাপা হয়েছে।
সরকার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। পাবলিক রিয়্যাকশন দেখে আবার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে। সর্বশেষ ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের মুনাফা অর্ধেক কমিয়ে আবার কয়েকদিনের মধ্যে আগের হারের কথাই ঘোষণা করল।
এসব লক্ষণ কতটা সরকারের জন্যে ভাল তা সময়ই বলে দেবে।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে সর্বশেষ যুব মহিলা লীগের নেত্রী পাপিয়ার ঘটনা ফাঁস হওয়া-সব মিলিয়ে সরকার বেশ চাপের মধ্যেই আছে। একদিক সামাল দিতে না দিতেই আরেকটা ঘটনা সামনে এসে যাচ্ছে। গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২৬ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে র্যাব।
মানুষের মনে সরকারের প্রতি বিরূপ মনোভাব গড়ে উঠছে, বলতে কোনো দ্বিধা নেই। এরই মধ্যে পানি আর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির খবরে মানুষের মনে চাপা ক্ষোভ জমে উঠছে। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।
কি বাড়েনি? চাল থেকে শুরু করে ডাল চিনি তেল, পেঁয়াজের কেজি এখনো এক শ টাকার নিচে নামেনি।
সরকারের কোনো কঠোর উদ্যোগ নেই এই দাম বৃদ্ধি নিয়ে। বাণিজ্যমন্ত্রী তার গাল ভরা বুলি আউরিয়ে যাচ্ছেন আর ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে চলেছে।
পত্রিকা স্ট্যান্ড থেকে ফেরার সময়কার দুএকটি কথা কানে বাজছে- কি আর হবে দাম বাড়ার কারণে? দু’একদিন পত্রিকায় লেখালেখি হবে। প্রেসক্লাবের সামনে বাম দলগুলো বক্তৃতা করবে। পত্রিকায় তাদের বিপ্লবী ছবি ছাপা হবে। টেলিভিশনের টক শো গরম করবে কেউ কেউ। এক সময় সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমরা মেনে নিব এই মূল্যবৃদ্ধিকে।
গত কয়েক বছরে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, পানির দাম বৃদ্ধির পর যা দেখেছে মানুষ তারই প্রতিফলন ওই কথায় ফুটে উঠেছে।
সরকারকে ডোবানোর জন্যে কারা এই বুদ্ধি দিচ্ছে? এ রকম কথাও শোনা যায় মাঝে মাঝে। আবার শোনা যায় আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের প্ররোচনায় কেউ কেউ এ কাজ করছে।
তা হলে সরকারের কি নিজস্ব বলে কিছু নেই? সবকিছু কি অন্যদের কথায় সিদ্ধান্ত নেয়? নাকি ক্ষমতায় থাকার জন্যে এখন আর পাবলিকের ভোটের প্রয়োজন হয় না-ওই কথাটাই চিরসত্য আজকে?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)