ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০
লাখ ডলার চুরি হওয়ার তিনমাস পরও তিনটি হ্যাকার গ্রুপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
পেছনে লেগে আছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্ক আবারো হামলার ঝুঁকিতে
রয়েছে বলে মার্কিন সংস্থার তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ নিয়োজিত সিলিকন ভ্যালির সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফায়ারআই’র তদন্তের কথা উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কিছু অবশিষ্ট ঝুঁকি যে এখনো রয়ে গেছে গভর্নর এবং বোর্ডকে তা বুঝতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক নেটওয়ার্ক এখনো নিরাপদ নয়, হ্যাকারদের দ্বারা হ্যাকিংয়ের কাজগুলো আবারো ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তদন্ত রিপোর্টের অল্প কিছু তথ্য দিলেও তদন্তে প্রভাব ও চুরি যাওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যাহত করতে পারে বলে পুরো তথ্য দিতে অস্বীকার করেন তথ্য সরবরাহকারী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্ত চলাকালীন কোনো রকম মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘গোটা ব্যাপারটাই তদন্ত করার জন্য আমরা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সাথে জড়িত আছি।’ এর বেশি কিছু বলেননি তিনি।
এ ব্যাপারে আনুষ্ঠনিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ফায়ারআইয়ের মুখপাত্র। কথা বলতে রাজি হয়নি ফায়ারআইয়ের সাথে কাজ করা ‘ওয়াল্ড ইন্টারফর্মেটিক্স’।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তদন্তকারীরা দুটি হ্যাকিং গ্রুপকে (পাকিস্তানী ও নর্থ কোরিয়ান) চিহ্নিত করতে পারলেও একটি দল এখনো অজানা। যেটি গ্রুপকে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করা যায়নি সেই ‘গ্রুপ জিরো’ চলমান তদন্ত হয়তো পর্যবেক্ষণ করছে।
তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিলেন, ‘গ্রুপ জিরো সেই হ্যাকার গ্রুপ যেখান থেকে সাইবার হামলা পরিচালিত হয়েছে।’
প্রতিবেদনে তদন্ত দল বলেছে, ‘জিরো গ্রুপের’ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর হামলার করার পরিকল্পনা ছিল; কিন্তু সেটা তারা বিস্তৃত করতে পারেনি।
চলতি মাসের শুরুর দিকে এই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হলেও আর কোনো হ্যাকার গ্রুপকে চিহ্নিত করতে পারেনি তদন্ত দল। এই রিপোর্ট নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন সুইফটের একজন মুখপাত্র।
সুইফট বৃহস্পতিবার জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে যেভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি হয়েছিল, ঠিক একই ধরনের আরো একটি সাইবার হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এবার হ্যাকারদের টার্গেট ছিল একটি কমার্শিয়াল ব্যাংক। তবে কত টাকা চুরি হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে সেটা জানানো হয়নি।
বেলজিয়ামভিত্তিক এই সেবাদান প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সুইফট সুবিধা দেয়। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় এই ঘটনা প্রমাণ করছে, বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনা কোন একক ঘটনা ছিল না। কিন্তু ওই ঘটনাটি ছিল ব্যাপকতর।
সুইফট স্বীকার করেছে যে প্রতারণাপূর্ণ অর্থ স্থানান্তর প্রমাণ লুকাতে সফ্টঅয়্যার পরিবর্তনকারীরা জড়িত। কিন্তু মেসেজিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে তারা কোনো প্রকার আপোস করেনি।
বিশ্বের বাণিজ্য সংবাদ বিষয়ক অন্যতম শীর্ষ সংস্থা ব্লুমবার্গ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানায়, তদন্তকারীরা তিনটি হ্যাকার গ্রুপের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়েছেন। এ তিনটি গ্রুপের মধ্যে একটি পাকিস্তানের এবং অন্যটি নর্থ কোরিয়ার। তবে অন্য হ্যাকার গ্রুপটি কারা এবং কোন দেশের, তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি।