এক সমুদ্র মাছ দিলেও মনে হচ্ছে খেতে পারব: বুবলী
'গল্প নির্ভর ছবি আমাকে অনেক টানে। যেখানে নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে কাজের অনেক সুযোগ থাকে সেসব ছবি করতে চাই। আমি সবসময়ই অভিনেত্রী হতে চেয়েছি।'
বড়পর্দায় এ সময়কার আলোচিত নায়িকা শবনম বুবলী। সংবাদ পাঠিকা থেকে ২০১৬ সালে রুপালী পর্দায় এসে শাকিব খানের নায়িকা হয়ে কাজ করেছেন নয়টি ছবিতে। সিনেমার দর্শকদের কাছে ঈদ মানেই যেমন শাকিব খানের ছবি, তেমনি গত তিন বছরে ঈদ মানেই বুবলীর ছবি দেখা গেছে। এবার ঈদেও শাকিব খানের সঙ্গে বুবলী অভিনীত ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ছবি মুক্তি পেয়েছে। ঈদে ছবি, নিজের ঈদ উদযাপন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বুবলী কথা বলেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে…
নিজের ছবি হিসেবে নয়, দর্শক হিসেবে ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ দেখে কেমন লেগেছে?
দর্শক হিসেবে বলবো সমসাময়িক নানান বিষয় নিয়ে চমৎকার গল্পের সামাজিক ছবি “মনের মত মানুষ পাইলাম না। আসলে সিনেমা তো অবশ্যই বিনোদনের মাধ্যম কিন্তু তার বাইরেও কিছু দায়বদ্ধতা তো থাকেই একটি সিনেমায়, সেই জায়গা থেকে এই ছবিটি সমাজের প্রতি কিছু বার্তা দিয়েছে। একজন দর্শক হিসেবে এই বিষয়টি উপভোগ করেছি।
‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ছাড়া ঈদের অন্য ছবি দেখেছেন?
এখনও দেখিনি। তবে অবশ্যই দেখবো। আসলে নিজের ছবি মুক্তি পেলে ওটাই কয়েকবার দেখার লোভ সামলাতে পারি না যে কেমন করলাম অন্য শিল্পীদের সাথে কাজ। আমি সবসময় দেশি বিদেশী প্রচুর ছবি দেখি। ছবি দেখা আমার একটা প্রিয় শখ। আর ঈদ এলে নানান ছবি থাকে। জমজমাট থাকে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং শিল্পীরা। এটা খুব ভালো লাগে।
অন্যান্য বার ঈদে মুক্তির পর শাকিব-বুবলীর ছবি যেভাবে আলোচিত হয়, এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না
হাহাহা, কে বললো আলোচনায় নেই! অবশ্যই আলোচনায় আছে। এই যে আপনি জিজ্ঞেস করলেন, এটাও তো এক ধরণের আলোচনা। আমাদের ছবি নিয়ে এমনটা যারা ভাবছেন তারাও কিন্তু মনের অজান্তেই আমাদের ছবি আলোচনায় রেখেছেন। তাছাড়া এবার বন্যা, বৃষ্টি আর ডেঙ্গুর কারণে একটা প্রভাব পড়েছে। কোরবানির ঈদে মানুষ নিজেদের কাজ নিয়ে একটু ব্যস্ত বেশী থাকেন। তারপরেও সাধারণ দর্শক হলমুখী হয়েছে। আসলে একজন মানুষ কিন্তু শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকলেই তবে হলে গিয়ে টিকেট কেটে ছবি দেখবেন, এই বিষয়গুলোও তো আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
সমালোচকরা বলছেন, যতগুলো ছবি করেছেন তার মধ্যে এবার সেরা অভিনয় করেছেন। আপনার অভিনয় নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য চোখে পড়েনি
এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি যে তারা আমার কাজ পছন্দ করেছেন। তাদের প্রশংসা আমাকে আরো ভালো কাজ করতে উৎসাহ দিচ্ছে। ভবিষ্যতেও চাইবো এমন ভালো কিছু গল্পের কাজ করতে, যেখানে আমার চরিত্র দিয়ে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ থাকবে। যদিও নানা কারণে সেটা সবসময় পাওয়া যায়না। তবে আমি চাই, নিজেকে প্রতিবার ভাঙতে।
সর্বশেষ দুই ছবিতে আপনার উপস্থিতি ও অভিনয় প্রশংসার দাবী রাখে। এর নেপথ্যে কী মালেক আফসারী ও জাকির হোসেন রাজুর মতো নির্মাতাদের সান্নিধ্য?
অবশ্যই! আমি সবসময় বলি যে একটি ভালো গল্প এবং একজন গুণী নির্মাতা থাকলেই একটি ভালো প্রজেক্ট হতে পারে। আফসারী স্যার সিনিয়র নির্মাতা কিন্তু তার চিন্তা ভাবনা যুগের সাথে সাথে অনেক স্মার্ট। উনি জেনারেশন বোঝেন, কোন সময়ে কি ধরনের কাজ বা অভিনয় মানুষ চাচ্ছেন উনি তা খুব ভালো বোঝেন। উনি গল্প বুঝিয়ে, আমার চরিত্র বুঝিয়ে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবির প্রথম শুটিং থেকেই আমাকে অনেক স্বাধীনতা দিয়েছেন যেন আমি সাবলীলভাবে আমার চরিত্রটি করি। কোনো বাধা ধরা নিয়মে রাখেননি, সত্যি অসাধারণ একজন নির্মাতা। আর রাজু স্যার তো যেদিন প্রথম আমাকে গল্প শুনিয়েছিলেন সেদিন আমি গল্প শুনতে শুনতে কাঁদছিলাম। গল্প শুনবার পুরোটা সময় পাশে বসা সবাই কোনো কথাই বলেননি। চমৎকার গল্প বলেন তিনি। পুরো ছবি চোখের সামনে নিয়ে আসেন, সেদিনই স্যার বলেছিল যে আমি আমার ছবির অর্পিতাকে দেখতে পাচ্ছি। স্যার অনেক স্নেহ করে আমাকে শুটিং এর পুরো সময় অর্পিতা না হলে পুতুল বলে ডাকতেন। সবাইকে বলতো মেয়েটা পুরো পুতুলের মত দেখতে আর লক্ষ্মী মেয়ে। যেভাবে চাচ্ছি সেভাবেই চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলছে। আসলে ওনাদের দুজনকেই অসংখ্য ধন্যবাদ এতো চমৎকার দুটি চরিত্রে আমাকে বেছে নিয়েছেন।
কোন ধরণের সিনেমা/চরিত্র আপনাকে টানে বা লোভ আছে কাজ করার?
আমি বরাবরই বলেছি যে গল্প নির্ভর ছবি আমাকে অনেক টানে। যেখানে নিজেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে কাজের অনেক সুযোগ থাকে সেসব ছবি করতে চাই। আমি সবসময়ই অভিনেত্রী হতে চেয়েছি।
ঈদে কার কাছ থেকে কী উপহার পেয়েছেন?
ঈদে পরিবারের কাছ থেকে তো অনেক উপহার পাই। আমি যেহেতু পরিবারের ছোট মেয়ে তাই আমিই বেশি উপহার পাই। আর যেহেতু এখন বড় হয়েছি তাই আমিও টুকটাক উপহার দেয়ার চেষ্টা করি।
ছবি বাদে এবার ঈদে সবচেয়ে স্পেশাল কী ছিল?
ছবি মুক্তি এটিই সবচেয়ে বেশি স্পেশাল থাকে ঈদে। এছাড়া কোরবানি, খাওয়াদাওয়া, নিজে রান্নাবান্না করা, এসব তো আছেই। কোরবানিতে টানা তিন দিন মাংসের বিভিন্ন আইটেম খেয়ে খেয়ে বিরক্ত হয়ে গেছি। এখন বিভিন্ন মাছ খাচ্ছি। পুরো এক সমুদ্র মাছ দিলেও মনে হচ্ছে এখন খেতে পারবো। হাহাহা……
নায়িকা হওয়ার আগে টিভিতে ঈদের অনুষ্ঠান-নাটক দেখতেন নিশ্চয়! সেই অভ্যাস এখনও আছে?
সত্যি কথা বলতে আগে থেকে আমি টিভি দেখি। নায়িকা হওয়ার আগে খবরগুলো বেশি দেখতাম। কারণ আমি যেহেতু সংবাদ পাঠিকা ছিলাম তাই পেশার কারণে আমাকে আপডেট জানতে হতো সব বিষয়ে। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ স্যারের কোনো নাটক মিস করতাম না। আর অবসরে তখন দেশি বিদেশি সিনেমা দেখতাম। ডিভিডি ক্যাসেটে পছন্দের সিনেমা দেখতাম। বেশ কয়েক বছর আগেও তো ইউটিউব অতটা সহজলভ্য ছিল না। আর এখন ঈদের ছুটিতে আসলে নানান ধরণের ছবি দেখা হয় বেশি। তবে কিছু কিছু নাটক দেখতে চেষ্টা করি।
এই সময়ে নাটকে কাদের কাজ ভালো লাগে?
ছোটবেলায় নাটকে যাদের দেখতাম তাদের মধ্যে সবাই যেমন দুর্দান্ত অভিনেতা অভিনেত্রীরা ছিলেন, এখন যারা কাজ করছেন এর মধ্যে অনেকে খুব ভালো করছেন। যদিও আমি নাম উল্লেখ করে বলতে পারবো না, কারণ সবার কাজ হয়তো দেখা হয়ে ওঠে না। তবে আমি নাটক দেখার চেষ্টা করি। কারণ আমাদের নাট্যাঙ্গনে অনেক ভালো ভালো মেধাবী নির্মাতা, শিল্পীরা রয়েছেন। তারা তাদের কাজ দিয়ে এই জায়গাটাকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন।
যতদূর জানি ছোটপর্দায় আপনার প্রিয় অভিনেতাদের একজন আফরান নিশো। যদি সিনেমাতে তার সাথে কাজের সুযোগ আসে কাজ করবেন?
আফরান নিশো খুব ভালো একজন অভিনেতা এবং ভার্সেটাইল অভিনেতা। অসম্ভব ভালো অভিনয় করেন। কিছুদিন আগে কয়েকজন আমাকে নিশো ভাইয়ের কয়েকটি নাটকের লিঙ্ক পাঠিয়েছেন। তখন আমি ওনার কাজ দেখেছি এবং এই ঈদেও ওনার কিছু কাজ দেখেছি যা অসাধারণ! সিনেমাতে কখনও তার সঙ্গে কাজের সুযোগ পেলে অবশ্যই করবো। পাশাপাশি দেখবো গল্প কেমন এবং নির্মাতা কে। সবকিছু মনের মতো হলে সবকিছু মিলিয়ে আমাদের কাজ দর্শকদের ভালো লাগবে।
নতুন ছবি ‘বীর’-এর শুটিং কবে থেকে?
ঈদের আগে তো শুটিং শুরু হয়েছে। আমি এখনও ক্যামেরার সামনে যাইনি। আগামী মাসে হওয়ার কথা রয়েছে। কাজী হায়াৎ আঙ্কেলের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ হতে যাচ্ছে। এতো বড় মাপের একজন নির্মাতা তিনি। চেষ্টা থাকবে নতুন কিছু শেখার।