এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বিডিআর বিদ্রোহে সংঘটিত পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত বিচার এখনও শেষ হয়নি। হত্যা মামলাটির বিচার এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির জন্য থাকলেও বিস্ফোরক মামলাটি নিম্ন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আটকে আছে। এর ফলে হাইকোর্টের রায়ে হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ব্যক্তিরাও বিস্ফোরক মামলার আসামি থাকায় তাদেরকে মুক্তি মিলছে না।
এই মামলার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন: ‘আমরা আশা করছি এ বছরই এ মামলাটা আপিল বিভাগে শুনানি করতে পারবো। আসামিপক্ষ হত্যা মামলাটির আপিলের সার সংক্ষেপ জমা না দেওয়ায় মামলাটা আমরা শুনানি করতে পারছিলাম না। ওনাদের সার সংক্ষেপটা জমা দেয়ার জন্য আমরা দরখাস্ত করেছি। সেই দরখাস্ত যখন আদালতে আসবে, তখন সারসংক্ষেপ দাখিলের জন্য আসামিপক্ষকে সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার আরজি জানানো হবে। তারা যদি তারা সার সংক্ষেপ জমা না দেয় তাহলে তাদের আপিলটা ডিসমিস চাওয়া হবে।’
অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হত্যা মামলায় হাইকোর্টে খালাস পেয়েছেন এমন অনেকের সাজাভোগ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু বিস্ফোরক মামলায় আসামি থাকায় আবার অনেকে জামিন না পাওয়ায় কারাগারে আছেন। হত্যা মামলায় খালাস ও সাজাভোগ শেষ হওয়া এরকম আসামির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এদিকে হত্যা মামলাটির চূড়ান্ত বিচারের জন্য সারসংক্ষেপ জমা দেয়া প্রসঙ্গে এই আইনজীবী বলেন, আগামী মাসের মধ্যে আমাদের আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। মর্মান্তিক এই ঘটনার চার বছর পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালত হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা হিসেবে পরিচিত এই মামলার রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে ১৭ থেকে ১ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেয়া হয়। আর নিম্ন আদালতের রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। এছাড়া ৪ আসামী নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার আগেই মারা যান। অন্যদিকে রায় ঘোষণার পরে মারা যান আরও কয়েকজন জন।
এরপর বিচারপতি মো. শওকত হোসেন এবং বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭শে নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ জন আসামীর মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫ জন খালাস পান। এই রায়ে ১৬০ জন যাবজ্জীবন প্রাপ্ত আসামীর মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল এবং ১৪ জনকে খালাস দেয়া হয়। তবে নিম্ন আদালতে যাদেরকে খালাস দেন তাদের মধ্যে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে হাইকোর্ট ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। আর ৪ জনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ৩৪ জনের খালাস আদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এছাড়া ২২৮ জনকে ১৩ থেকে ১ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে হাইকোর্টের এই রায়ে খালাস ও সাজা কম পাওয়া ৮৩ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে পরবর্তীতে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে, মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া দুই শতাধিক আসামি খালাস চেয়ে আপিল করেছেন। যা এখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। এদিকে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা ওপর মামলাটির বিচারকাজ ২০১১ সালে শুরু হয়ে এখনও তা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে আছে।