২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে বিড়ি-সিগারেটের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে বিড়ি-সিগারেট দাম বাড়বে। সংশ্লিষ্টখাতের ব্যক্তি পর্যায় থেকে কোম্পানি পর্যায়ে ৪৫ শতাংশ হারে একটি একক কর হারের সুপারিশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় সব রকম বিড়ি-সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছ থেকে ৪৫ শতাংশ কর আদায়ের প্রস্তাব রাখেন। বিদ্যমান কাঠামোতে সিগারেট প্রস্তুতকারী পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোকে ৪০ শতাংশ কর দিতে হতো। তবে নন পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে আগে থেকেই ৪৫ শতাংশ কর ধার্য ছিলো।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ উভয়ের জন্য সিগারেট অত্যন্ত ক্ষতিকর। সিগারেটের ক্ষতিকারক দিক বিবেচনার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত পাবলিক ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিসহ সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রয় ব্যবসায় নিয়োজিত অন্যান্য করদাতা ব্যক্তি, অংশীদারী ফার্ম ইত্যাদির ওপর ৪৫ শতাংশ হারে একটি একক করহার ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে স্বাস্থ্যগত বিষয়টি নয় বরং এ প্রস্তাবে বড় সিগারেট কোম্পানিগুলোই লাভবান হবে বলে বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে প্রজ্ঞা, আত্মা ও এইচডিআরসি নামের তিনটি তামাক বিরোধী সংগঠন। সংগঠনগুলোর মতে, বিড়ি ও কম দামি সিগারেটে সামান্য করবৃদ্ধি করা হলেও ধোঁয়াবিহিন তামাকে করারোপের কোনো পদক্ষেপ নেই এবারের বাজেটে। দামি সিগারটে করহার প্রায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
গতবছরের তুলনায় এবছরে জনগণের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কার্যত দামি সিগারেট আগের বছরের তুলনায় সস্তা হয়ে গেল। কেবল বড় তামাক কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবারের বাজেটে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার তেমন কোন পদক্ষেপ নেই।
বিড়ি-সিগারেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বেশ সময় নিয়েই কথা বলেন।
তিনি জানান, ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল ( এফসিটিসি) স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী ধূমপান বিরোধী রাষ্ট্রীয় নীতির সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা, তামাকজাত পণ্যের স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্য এর ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এই খাতের একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলেও উল্লেখ করেন মুহিত।
দীর্ঘদিন যাবৎ সিগারেটের খাত থেকে কর আদায়ের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক সিগারেটের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার একটি রীতি প্রচলিত ছিলো- যা বাজার অর্থনীতিতে মোটেও কাম্য নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ কারণে এই প্রথমবারের মতো সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দিয়ে অধিক মূল্যের সিগারেটের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক ও কর আরোপের প্রস্তাব করার কথা জানান ।
তবে শ্রমিক স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিড়ি খাতের শুল্ক হারে বিগত বছরগুলোতে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি বলে জানান অর্থমন্ত্রী। বর্তমান শুল্ক কাঠামো অনুযায়ি ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার বিড়ির প্যাকেটের মূল্য করসহ ৬.১৪ টাকা এবং ফিল্টারসহ ২০ শলাকার প্রতি প্যাকেট বিড়ির করসহ মোট মূল্য দাড়ায় ৬.৯২ টাকা।
সহজলভ্যতার কারণে ব্যাপক সংখ্যক ভোক্তা এর ব্যবহারের সুযোগ নেয় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এসব বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যমান ট্যারিফ মূল্য যৌক্তিকীকরণের মাধমে করসহ ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার প্যাকেটের দাম ৭.০৬ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার বিড়ির প্যাকেটের মূল্য ৭.৯৮টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে বিড়ি পেপারের ওপরও ২০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।