চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

একা নারীর লড়াইয়ের পথটা বড় বন্ধুর

সংসারেে মেয়ে যখন জন্ম গ্রহণ করে তখন বলা হয়, ‘ ঘরে লক্ষ্মী এসেছে।’ এ কথা দিয়ে জন্মের পরই মেয়েটিকে প্রতিনিয়ত যেন দিতে হয় ভাগ্য পরীক্ষা। এমনকি তার বাবার কর্মজীবনে সফলতা থেকে শুরু করে ব্যর্থতা সব কিছু যেন সে নিয়ন্ত্রণ করে। সবার অজান্তে মেয়েটি বড় হতে থাকে সে লক্ষ্মী না অপয়া- এ শব্দ দুটি দিয়ে সাপ লুডু খেলার মতো জীবন নিয়ে।

জীবনের পথ চলতে গিয়ে নারীকে পদে পদে শুনতে হয় সে লক্ষ্মী, না অপয়া । এ শব্দগুলোর সাথে লড়াই করে যে নারীরা সমাজে টিকে আছে তারা মানুষ হিসাবে সংগ্রাম করে। তাদের কাছে শারীরিক অবয়বের নারী পুরুষ মুখ্য নয়।

সাধারণত মেয়েদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি শিখানো হয় জীবনে যাই হও না কেন তোমাকে সংসার সামলাতে হবে । স্বামীকে খুশি করতে হবে। সন্তানদের মানুষ করতে হবে। আর তাই সংসারের কাজ জানতে হবে সবার আগে। যতই আধুনিকতার ছোঁয়া লাগুক না কেন মানুষের জীবনে, আমাদের সমাজ পরিবার থেকে এ ধারণা আজও শেষ হয়ে যায়নি।

বয়সের সীমা ১৬’ তে পড়তেই চিন্তা শুরু মেয়ের বিয়ে নিয়ে। যতভাবে স্বামীর ঘরে মেয়েকে সুখী করা যায় তার চেষ্টা থাকে মেয়ের পরিবারের। বিয়ের পর স্বামীর ঘরে পা দিতেই শুনতে হয়ে জন্মের পরের সে কথাটি ‘বউ ঘরে লক্ষ্মী নিয়ে আসবে।’ এবারের ভাগ্যে পরীক্ষাটা অনেক বেশী কঠিন। কারণ মেযেটি বুঝে সংসারে চুন থেকে পান খসলেই বলবে সব দোষ তার। সে অপয়া। হয়ত কেউ কেউ বলবে এসব এখন অচল কথা। সেটা বলে সাধুবাদ পেতে পারে কিন্তু নারী জীবনের এটা এক নির্মমতা। আসলে রেল লাইন সমান্তরালভাবে বইলেও জীবন সেভাবে চলে না।

একদিন হয়ত সে নারী আপন ভাগ্যেকে নিয়তির বিধান মনে করে ঘর ছাড়া । শুরু হয় জীবনের আরেক গল্প। এমন হাজারো গল্পময় জীবনের নারীদের কথা কেউ জানে না। তারা কি করে আর্থ সামজিক ব্যবস্থার সাথে লড়াই করে সন্তান মানুষ করে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে। তাদের জীবনের হতাশা বিষণ্ণতা শুধুই তার অনুভব করে। কেননা এ সমাজে ঘর ছাড়া নারীকে কোন যাচাই বাছাই ছাড়া শুনতে হয়, ‘ঘর যখন ছেড়েছে দোষ তার।’ আর আইনি প্রক্রিয়াতে সংসার বিচ্ছেদের প্রাপ্তিটুকু নারী এবং সন্তানরা তেমন করে পায় না। কারণ সেখানে রয়েছে নানা দুর্বলতা।

নারী দিবস এলেই সবার মুখে নারীদের উচ্ছ্বসিত কথা সকল স্থানে। নারী পুরুষের কোন বৈষম্যতা আর থাকবে না তা নিয়ে সেমিনার সভা সমাবেশ কত কি হয়।

কিন্তু যারা জীবনের সংগ্রামটা একা করছে তাদের জন্য কি কিছু করার নেই এ রাষ্ট্রের। একজন একা নারী কাজের ক্ষেত্র থেকে সকল স্থানে নানাভাবে বিব্রত হয় । মাঝে মাঝে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয় যেন স্বামীবিহীন একজন নারী হওয়াটা জীবনের চরম অপরাধ। কিন্তু কেন এমন হবে?

কোন কাজের ক্ষেত্রে সবার আগে স্বামীর পরিচয় টাই মুখ্য হয়ে যায়। অথচ একজন পুরুষকে কেউ কোন দিন প্রশ্ন করে না তার স্ত্রী কি করে, তার নাম কী?

তারপর দেখা যায় বিপরীত পরিবেশ যখন সে নারী জীবন পরিচালনা করে তখনও প্রশ্ন আর নানা কথা শুনতে হয়। আর এমন কথাতে বিশেষ করে আহত হয় তার সন্তানটি। যার প্রভাবে হয়তবা সে সন্তানটি বেছে নেয় বিপথগামী কোন পথ। একজন সংগ্রামী মায়ের সন্তান যদি সুস্থ ভাবে বড় না হয় তবে সেটা তার জীবনের সকল প্রচেষ্টাকে অসার করে দেয়।

এমন জীবনের সংগ্রামে বেঁচে থাকার লড়াই করতে করতে নারীটি ভুলে যায় সে কি নারী না পুরুষ । কারণ আত্মিকভাবে সে একজন মানুষ হয়ে তার সব দায়িত্ব পালন করে। সন্তানের কাছে সে বাবা সে মা। তার আপন কোন সত্ত্বা আর থাকে না। জীবনের ভালোবাসার গল্প গুলো হয়তবা স্বপ্ন হয়ে থাকে চিরদিন। কারণ জীবনের দায়ভারটাই তার সব।

আবার এমন নারীদের অনেকের নিজেদের সফলতা বা সন্তানের সফলতার অন্তরালের অশ্রুটুকু কেউ জাানে না। একান্ত একাকীত্বে সে শুধু নিজে খুঁজে বেড়ায় তার আপন সত্ত্বাকে। হতাশা বিষাদ বা আনন্দ তাকে ছুঁতে পারে না। কারণ জীবন সংগ্রামটা তার একমাত্র বাঁচার অবলম্বন।

এমন হাজারো নারীদের জীবনে রয়েছে সংসার আর সন্তানদের সফলতা কিংবা ব্যর্থতার কাহিনী। জীবনের চাহিদার কাছে সন্তানকে নিয়ে তাদের কারো কারো স্বপ্ন হয়ত পূরণ হয় না দৈন্যতার কারণে। কিংবা নিজের জীবনের সব টুকু বির্সজন দিয়ে লড়াই করে সমাজে টিকে থাকে নীরবে নিভৃতে। তবু তারা নারী নয় একজন মানুষ হিসাবে বেচেঁ থাকার সংগ্রাম করে নিরন্তর। সে নারী বা পুরুষ তা যেমন মূল বিষয় নয় তেমনি নারী লক্ষ্মী না অপয়া তা বড় গৌণ হয়ে যায় জীবনে। কেননা তার জীবন যুদ্ধটা শুধুই তার একার।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)