ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই নজরকাড়া পারফরম্যান্সের জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪ ওভার বোলিং করে ২৩ রান দিয়ে ৪টি উইকেট তুলে নেন তিনি।
কাটার মাস্টারের বোলিং জাদুতে এসেক্সের বিপক্ষে ২৪ রানের জয় পেয়েছে সাসেক্স। ম্যাচে বোলিং ছাড়াও দুর্দান্ত একটি ক্যাচও নিয়েছেন বাংলাদেশের বিস্ময় বালক মোস্তাফিজ।
‘দ্য ফিজ’ খ্যাত মোস্তাফিজের সাফল্যে মুগ্ধ হয়ে প্রবাসী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন:
‘আমি সাধারণত রাতে তাড়াতাড়ি বিছানায় যাই। অনেক আগে থেকেই ভোরে উঠে সকালের নামাজ পড়ার অভ্যাস। ছোট বেলায় ছয় ভাই-বোনের কেউই আমরা সকালে দেরি করে উঠতে পারতাম না। আমাদের বাবা খুব ভোরে সবার রুমে রুমে গিয়ে দরজায় শব্দ করতেন। ভোরে নিয়ম করে নামাজ এবং হাঁটাহাঁটি করতে হবে এই অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকেই।
মুস্তাফিজের খেলা ছিল, তাই নামকরা ক্রীড়া সাংবাদিক ছোট ভাই রনিকে আগে থেকেই জিজ্ঞেস করে রেখেছিলাম মুস্তাফিজের খেলা কখন আর আর কোন চ্যানেলে দেখাবে? সে জানাল, মুস্তাফিজের খেলা কোনো চ্যানেল দেখাবে না; তবে খেলা শুরু হবে আমার এখানকার সময় রাত ৯টায়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম ক্রিকইনফো’র স্কোরকার্ড’ই দেখব।
সমস্যা হলো, মুস্তাফিজের দল ব্যাটিং করেছে প্রথমে। এর পর মুস্তাফিজের দল যখন বোলিং করতে আসে, আমার এখানে ততক্ষণে সাড়ে দশটা! ঘুমের সময় হয়ে গেছে! কিন্তু মুস্তাফিজ যে ততক্ষণে বোলিং’ই করতে আসেনি। ছেলেটা যখন বোলিং করতে আসলো, ততক্ষণে পাঁচ ওভার হয়ে গেছে, রাত ১১টাও বেজে গেছে। ভাবছিলাম ঘুমিয়ে যাবো, নাকি দেখবো স্কোরকার্ড! শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম, মুস্তাফিজের খেলা বলে কথা। দেখিই না ছেলেটা কেমন খেলে!
মুস্তাফিজ ইংল্যান্ডে নেমেই সাসেক্সের হয়ে খেলতে নিমে গিয়েছিলো কাল! বাদ বাকী ব্যাপার রীতিমত ইতিহাস। চার ওভার বল করে ২৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট। কারো উইকেট উপড়ে দিয়েছে তো কেউকে কাটারে এমন বিভ্রান্ত করেছে যে ব্যাটসম্যানরা বুঝতে পারছিলো না এর উত্তর কি হতে পারে! হয়েছে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ’ও!
খেলা শেষে সাসেক্সের অধিনায়ক লুক রাইট বলেছেন – ‘আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে মুস্তাফিজকে এখানে পেতে। এখন আমরা দেখতেই পাচ্ছি – আমাদের সময় ও শ্রম একটুও বৃথা যায়নি।’
লুক রাইটের এই কথা শুনে যখন ঘুমাতে যাচ্ছি, তখন আমার এখানে রাত একটা বেজে গেছে। ঘুমানোর সময় ভাবছিলাম – জেগে থাকাটা সার্থক হয়েছে। বাংলাদেশের সময় রাত চারটা তখন। আমার মতো কিছু ক্রিকেট পাগল মানুষ ছাড়া বেশিরভাগ লোকজন ঘুমাচ্ছে তখন। তবে এই মাত্র ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলাম – মানুষজন ঘুমালেও সকাল বেলা উঠে ঠিকই তারা খোঁজ নিয়েছে আমাদের মুস্তাফিজের খবর। পুরো ফেসবুক জুড়ে চলছে মুস্তাফিজ বন্দনা। জঙ্গি হামলা, ক্যামেরা কেনা ইত্যাদি ইত্যাদি ইস্যু এক নিমিষে মুস্তাফিজের কাছে ফেল মেরে গেছে।
মুস্তাফিজ ইউ লিটল বিউটি। উই অল লাভ ইউ। মেক আস প্রাউড। তোমার কাঁধে চড়ে নিশ্চয় একদিন আমরা বিশ্বকাপ জিতবো!’