চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

একতরফা কিছু হতে পারে না: শাইখ সিরাজ

বাংলাদেশে বিদেশি টিভির প্রচারে দেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন বন্ধের নির্দেশের পর বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

বাংলাদেশে ডাউনলিংক করে সম্প্রচার করা বিদেশি টিভি চ্যানেলে দেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে তথ্য মন্ত্রণালয় যে নির্দেশ দিয়েছে, সে বিষয়ে বুধবার বিবিসি বাংলার প্রত্যুষা অনুষ্ঠানে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রচার হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে যেসব বিদেশি টিভি চ্যানেল দেখা যায় সেগুলোতে দেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনে বিদেশি টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এ আইনের লঙ্ঘন হলে লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা রয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দীর্ঘ দিন ধরেই বিদেশি বিশেষ করে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোতে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলো। সরকারি ঘোষণায় সেই দাবি পূরণ হবার পর তাদের প্রতিক্রিয়া কী জানতে বিবিসি বাংলার পুলক গুপ্ত কথা বলেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ-এর সঙ্গে।।

সাক্ষাতকারটির পূর্ণ বিবরণ:

শাইখ সিরাজ: এটা বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের যেভাবে বিকাশ হচ্ছিলো, এটা একটা ইন্ডাস্ট্রির দিকে আস্তে আস্তে যাচ্ছিলো, অনেক মানুষের কর্মসংস্থান, আমাদের বিজ্ঞাপন বাজার- সবকিছুর একটা প্রসার ঘটছিলো। কিন্তু বিদেশি চ্যানেলগুলো আসার পর সেটা প্রচণ্ড হুমকির মুখে পড়ে যায়।

আপনি খেয়াল করবেন যে, অনেকগুলো চ্যানেল প্রায় বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। অ্যাটকোর (অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্স) একটা দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এটা। সেই দাবির প্রেক্ষিতেই এত বছর পর এসে সরকার এটা মিনে নিলো এবং সেটা নিঃসন্দেহে আমাদের দেশে বিকাশমান টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য ইতিবাচক দিক। এবং (এর ফলে) আবার এটা পুরোদমে আগের মত অবস্থায় ফিরে আসবে। এর মধ্যে আরও পলিসি সাপোর্ট আছে, সরকারের-রাষ্ট্রের যেগুলো দেয়া দরকার বলে আমি মনে করছি।

বিবিসি: যে বিদেশি চ্যানেলটা বাংলাদেশে বসে দেখা যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের পণ্যের বিজ্ঞাপনটা দেয়ার অসুবিধা কী?

শাইখ সিরাজ: যে সমস্ত পণ্যগুলো গ্লোবাল সেগুলো সব দেশেই। যেমন আপনি কোনোভাবেই রহিত করতে পারবেন না যে, প্রাণতো আমাদের দেশের একটি বড় প্রতিষ্ঠান। তার ইনভেস্টমেন্ট ইন্ডিয়াতেও আছে, তাদের গ্লোবাল প্রোডাক্ট তারা তৈরি করে। সেই জায়গায় সেটা যাবে। সেখানে আমরা অপত্তি জানাইনি। আপত্তি যেটা ছিলো, আমাদের দেশের ভেতরে যে বিজ্ঞাপনগুলো আমরা ওন করতাম, আমাদের দেশিয় চ্যানেলগুলো, সেটা বিদেশি চ্যানেলগুলো এখানে আসাতে তাদের ওখানে এটা প্রচার হচ্ছে। অটোমেটিক্যালি আমাকে যে অর্থটা দিতো সে, সেটা ওখানে চলে যাচ্ছে। আপত্তিতো সেই জায়গাগুলোতে ছিলো।

বিবিসি: যে টিভি চ্যানেলগুলো, ধরুন ইংলান্ডে বসে যে চ্যানেলগুলো দেখা যায়, বিদেশি চ্যানেল সেগুলোতে ইংল্যান্ডের পণ্যের বিজ্ঞাপন(ই) দেখা যায়। কারণ ইংল্যান্ডের লোক ইংল্যান্ডে বসে বিদেশি চ্যানেলটা দেখছে, সুতরাং তারা তাদের দেশের (ইংল্যান্ডের) বিজ্ঞাপন দেখতে চায় বা চাইবে।

শাইখ সিরাজ: এক্সাটলি। যখন ইংল্যান্ডে চ্যানেল আই দেখা যায়, তখন আমি কিন্তু আমার দেশের বিজ্ঞাপন ওখানে দিতে পারি না। অর্থাৎ আপনি যখন ডাউনলোড করছেন, তখন আমার দেশের বিজ্ঞাপন ফেলে দিয়ে তার দেশের বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে। আমরাতো সেরকমই একটা কাঠামোর কথা দীর্ঘদিন যাবৎ বলে আসছি (যেখানে বিদেশি চ্যানেলগুলো রিয়েল টাইম সম্প্রচার হবে না, ডাউনলিংক হবে আগে, এরপর বিদেশি বিজ্ঞাপন ফেলে দিয়ে সেখানে দেশি বিজ্ঞাপনসহ প্রচার হবে। এতে দেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন দেশেই থাকবে)।

বিবিসি: কিন্তু এটাওতো সত্য যে, বিদেশি চ্যানেলগুলোর বাংলাদেশে প্রচুর দর্শক আছে। এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে, সেখানে বাংলাদেশি চ্যানেলগুলোর তাদের সঙ্গে পাল্লা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এই বিষয়টা আপনারা কিভাবে মোকাবিলা করবেন?

শাইখ সিরাজ: এ বিষয়ে আমি আপনার সাথে একদম দ্বিমত পোষণ করছি। এ কারণে যে, আমার সমাজব্যবস্থা, আমার ধর্ম, আমার আচার-আচরণের সাথে যে সমস্ত অনুষ্ঠানগুলো দেখানো হয় এবং যেগুলোকে তথাকথিত জনপ্রিয় বলা হয়, সেটা যায় না। তাহলে আমি আমার নতুন ইন্ডাস্ট্রিকে রাষ্ট্রীয় পক্ষ থেকে সাপোর্ট যদি না দেয়া হয়, তাহলে আমার ইন্ডাস্ট্রিটা বড় কী করে হবে! আমারটা পিছিয়ে আছে এটা আমি কখনোই মানতে চাই না।

বিবিসি: আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে যে, বিদেশি চ্যানেলগুলোতে এখন যদি বাংলাদেশের পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখা না যায়, তাহলে সেখানে বিদেশি পণ্যের বা ধরুন ভারতীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখা যাবে, সেটাই কি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের যারা শিল্পপতি পণ্য উদ্যোক্তা তাদের স্বার্থের অনুকূলে হবে?

শাইখ সিরাজ: একটা কোনো জায়গায় একটা কাঠামোতে আসতে হবে। আমি বলছি যে, আমি আমার অগ্রসরমান একটা নতুন ইন্ডাস্ট্রি, সেখানে পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন আছে। পলিসি সাপোর্ট দিয়ে সেই পৃষ্ঠপোষকতা আমাকে কোনো না কোনোভাবে করতে হবে। কই আমাদের চ্যানেলগুলোতো ভারতে, খোদ পশ্চিমবঙ্গে দেখা যায় না। তাহলে সেটাকে আপনি কীভাবে (দেখবেন)? আপনাকে যদি এখন প্রশ্ন করি, তাহলে কী উত্তর দেবেন? সে দেশের সরকার তাকে ওভাবেই সাপোর্ট দিচ্ছে।

বিবিসি: আপনি তাহলে মনে করছেন বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলেই যাচ্ছে এই জিনিসটা (তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ)?

শাইখ সিরাজ: বাংলাদেশের টেলিভিশন এবং বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের বাজারটার স্বার্থের অনুকূলে হবে এটা। এতে  কোনো সন্দেহ নেই। সময়ের সাথে এটা পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু আমি বারবার যেটা বলছি, আমাদের দেশের চ্যানেলগুলো ভারতেও যদি প্রদর্শিত হতো অবাধে, যেমন তাদেরটা হচ্ছে; আমাদের কোনো আপত্তি থাকতো না। কিন্তু একতরফা জিনিসতো হতে পারে না।