গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র, আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমানের ছেলে সাম্য নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ও হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা ছিল আগাগোড়াই রহস্যজনক। থানায় করা জিডির ব্যাপারে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ।
সহযোগিতা না পেয়ে এক রকম বাধ্য হয়ে পুলিশকে ছাড়াই কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে নিয়ে ছেলে নবম শ্রেণীর ছাত্র আশিকুর রহমান সাম্যকে খুঁজতে নামেন আতাউর।
জানতে পারেন, দুপুরের দিকে সাম্যকে ডেকে নিয়ে গেছে তার স্কুল বন্ধু হৃদয় সরকার। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে তা অস্বীকার করে হৃদয়। লোকজনের সন্দেহ হলে একরকম জোর করেই হৃদয়ের বাড়ীতে তল্লাসী চলে।
সেসময় হৃদয়ের শোবার ঘরে পাওয়া যায় নিখোঁজ সাম্যের একটি স্যান্ডেল। এতে সন্দেহ আরও তীব্র হয়।
এরপর তারা নিশ্চিত হয় যায়; এরাই সাম্যকে গুম অথবা হত্যা করেছে। পৌর মেয়র বিষয়টি উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নজরে আনলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাধ্য হয়ে সেখানে যায় গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ।
ব্যাপক জিজ্ঞাসায় হৃদয় স্বীকার করে তারা কয়েকজন মিলে সাম্যকে বাসায় ডেকে এনে চেতনা নাশক দ্রব্য মেশানো ভাত-মাছ খেতে দেয়। খাওয়া শেষে সাম্য ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পরলে দুই পা এক সাথে রশি দিয়ে বাঁধার পর গলায় রশি দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
এরপর মৃতদেহ চটের বস্তায় ভরে লাশের উপরে খড় ও গাছের পাতা দিয়ে বস্তার মুখ রশি দিয়ে বেঁধে পাশের বাড়ীর সুপারির বাগানে সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখে। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী ওই স্থানের সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখা বস্তাটি পুলিশকে দেখিয়ে দেয় হৃদয়।
উদ্ধার হয় সাম্যের হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্দী লাশ। পুলিশ আটক করে হৃদয়ের মা রাবেয়া বেগমসহ ৮ জনকে। এদের তিনজন পরে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িত বলে ম্যাজিসট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারার বিধান মতে ম্যাজিষ্ট্রেট ওই জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
ঈদের আগের দিন দুপুর থেকে নিখোঁজ থাকার পর ঈদের দিন সকালে উদ্ধার হয় পৌর মেয়রের ছেলে সাম্যের মৃতদেহ।
ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
এই ঘটনায় পৌর মেয়র বাদি হয়ে ২ নারীসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই কল্যাণ কুমার চক্রবর্তী চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন, সাম্যের গলায় ও পায়ে রশি দিয়ে বাঁধার দাগ রয়েছে। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে তা মোটামুটি নিশ্চিত। পলাতক তিন আসামিকে আটক করতে চেষ্টা করছেন তারা।
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার আশরফুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, পলাতক তিন আসামিকে গ্রেফতার করা না গেলেও মামলার তদন্ত তেমন বিঘ্নিত হবে না। বেশিরভাগ আসামি গ্রেফতার হয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তি এবং ঘটনার বিভিন্ন আলামত থেকে মামলার তদন্ত শেষ করে আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে।
এর আগে শনিবার হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে উত্তেজিত জনতা ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। জনতা হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে ও আগুন দেওয়র চেষ্টা চালায় অভিযুক্তদের বাসভবনে। সেসময়ও নিরব থাকে পুলিশ।