প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল দুবাইয়ের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এর কারণে মৃত্যু হয়েছে শ্রীদেবীর। সেই সময়ে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছিল, মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিলেন বনি কাপুর ও ছোট মেয়ে খুশি কাপুর। এরপরেই ঘটনা ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করে। মিডিয়াগুলোতে প্রকাশ হওয়া শুরু করে নানা রকম ঘটনা। বাড়তে থাকে রহস্য।
রবিবার শ্রীদেবীর প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ পায়। সেখানে নিশ্চিত করা হয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। সঙ্গে জানা যায় বিয়ের অনুষ্ঠানে নয় বরং জুমেইরাহ এমিরেটস টাওয়ার এর হোটেলের বাথরুমে মৃত্যু হয়েছিল তার। তখন আরও একটি বিষয় জানা যায়। তা হলো, বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ২১ ফেব্রুয়ারি মুম্বাই ফিরে আসেন শ্রীদেবীর স্বামী বনি কাপুর ও তার ছোট মেয়ে খুশি। এরপর টানা দু’দিন হোটেলের কক্ষে একা ছিলেন শ্রীদেবী। এই দুদিন তিনি রুম থেকেও বের হননি।
২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য আবার দুবাই যান বনি কাপুর। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হোটেলে পৌঁছে তিনি শ্রীদেবীকে ঘুম থেকে তোলেন। ১৫ মিনিট দুজনে কথাবার্তা বলেন। এরপর বনি কাপুর শ্রীদেবীকে ডিনারে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন এবং প্রস্তুত হতে বলেন। শ্রীদেবী ফ্রেশ হবার জন্য বাথরুমে ঢোকেন। এরপর অনেক সময় পেড়িয়ে যাওয়ায় বনি দরজা ধাক্কা দেন। কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে অজ্ঞান অবস্থায় শ্রীদেবীকে বাথটাব থেকে তুলে আনেন। বনি তার বন্ধুকে ডাকেন এবং দুজনে মিলে শ্রীদেবীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে জানানো হয়, আগেই মৃত্যু হয়েছে শ্রীদেবীর।
এদিকে সোমবার সকালে আবারও ময়না তদন্ত করা হয় শ্রীদেবীর। আগের ময়না তদন্তের রিপোর্ট অসম্পূর্ণ মনে হওয়ায় দ্বিতীয় এই ময়না তদন্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
সোমবার দুপুর নাগাদ ভারতের আরেকটি সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয় একদমই ভিন্ন তথ্য। সেখানে বলা হয় যে শ্রীদেবী রুম সার্ভিসে ফোন করে পানি খেতে চেয়েছিলেন। হোটেল বয় পানি দিতে আসে রাত সাড়ে দশটার দিকে। এরপর অনেকক্ষণ দরজায় কড়া নেড়ে সাড়া না পেয়ে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়। হোটেল কর্তৃপক্ষ দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে এবং গিয়ে বাথটাবে শ্রীদেবীকে অচেতন অবস্থায় পায়। এই সময়ে রুমে আর কেউ ছিলনা বলে জানায় তারা।
দ্বিতীয় ময়না তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ পায় সোমবার বিকেল নাগাদ। সেখানে নিশ্চিত করে বলা হয়, দুর্ঘটনাবশত পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে শ্রীদেবীর। তার শরীরে অ্যালকোহলের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। পানিতে ডুবার আগেই তিনি অচেতন ছিলেন বলে জানানো হয়। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য এবং রিপোর্টে কোথাও বলা হয়নি, শ্রীদেবীর শরীরে বাইরে থেকে কোনও আঘাতের চিহ্ন মিলেছে।
মৃত্যুর পর থেকে এত রকম তথ্য পাওয়ার কারণে পুলিশ এবং ভক্তদের মনে স্বাভাবিকভাবেই বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। দুদিন আগেও নিশ্চিত ভাবে বলা ‘হার্ট অ্যাটাক’ শব্দটি এখন একবারও বলা হচ্ছে না। বাথরুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা ছিল। তাই বিষয়টি খুন নয়। তবে কি আত্মহত্যা? স্বামী-মেয়ে ফিরে আসার পরও দুদিন দুবাইয়ের হোটেলে কেন ছিলেন এই অভিনেত্রী? হতে পারে বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন তিনি। এছাড়াও প্রশ্ন উঠছে, সামান্য উচ্চতার একটা বাথটাবে কী করে ডুবে গেলেন পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার এই অভিনেত্রী!
নানা প্রশ্নের উত্তর দুবাই পুলিশও খুঁজছে। মৃত্যুর বিষয়ে বনি কাপুরকে দুবাই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সিল করে দেয়া হয়েছে শ্রীদেবীর সেই কক্ষটি। সঙ্গে হোটেল বয়দেরও জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়েছে। শ্রীদেবীর ফোন কল লিস্ট দেখা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে হোটেলের লগ। শ্রীদেবীর অতীতের মেডিকেল রিপোর্টগুলোও দেখা হচ্ছে। কোনো প্লাস্টিক সার্জারি বা ডিপ্রেশন দূর করার ওষুধের প্রভাবে তিনি অচেতন হয়েছিলেন কিনা তা জানার জন্য। যতক্ষণ পুলিশ বিষয়গুলো সম্পর্কে নিশ্চিত না হবে, ততক্ষণ শ্রীদেবীর মরদেহও ভারতে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না তদন্তের সুবিধার্থে।