চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

একটি ছবি ও একজন হতভাগ্য মা

একটি ছবি সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে গত দুদিন ধরে। ছবিটি এই বাংলার এক হতভাগ্য মায়ের। যার পুত্র সন্তানটি রাজনৈতিক কোন্দলের নৃশংস শিকার হয়েছেন। রাজনীতির মারপ্যাঁচে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী। প্রথমে তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়েছিল, কিন্তু পরে ময়নাতদন্তে বেরিয়ে এসেছিল তার শরীরে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন।

একজন মা তার ছেলের হত্যার বিচার চাইছেন আজ প্রায় তিন বছর যাবত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সব কিছু যেনো থেমে আছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা দিয়াজ হত্যা নিয়ে তেমন একটা অগ্রগতি নেই। সন্তান হারিয়ে ও বিচার না পেয়ে কী বেদনার দুর্বহ কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন একজন মা, তা এই ছবিটি দেখলে বোঝা যায়। বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে।

২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন উত্তর ক্যাম্পাসে নিজ বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজের লাশ। ঘটনার পর দিন প্রথম দফা ময়নাতদন্ত করা হয়। ২৩ নভেম্বর ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। দিয়াজের পরিবার এ ঘটনাটিকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ বলে দাবি করে আসছিল। দিয়াজের লাশ উদ্ধারের চার দিন পর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন। ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই দেয়া দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দিয়াজের শরীরে হত্যার আলমত রয়েছে বলা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর দিয়াজের মায়ের করা এজাহার হত্যা মামলা হিসেবে নিতে হাটহাজারী থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু প্রশাসন আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়নি।

একমাত্র ছেলের হত্যার বিচারের দাবিতে গত বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনশন করছিলেন দিয়াজের হতভাগ্য মা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকশিত একটি পত্রিকায় দিয়াজ হত্যার আসামীর ছবি দেখে তিনি সমিতির সভাপতিকে প্রশ্ন করলে পান দুর্ব্যবহার। এ সময় তিনি বিলাপ করতে থাকেন। একপর্যায়ে মাঠে সৃষ্টিকর্তার কাছেও তিনি ছেলে হত্যার বিচার চাইলেন। খেলার মাঠেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিচার না হওয়া এবং অভিযুক্তের ছবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনায় থাকার বিষয়টি উদ্বেগের বলে মনে হয়েছে আমাদের কাছে।

মাঠে উপুর হয়ে পড়ে থাকা একজন মায়ের এই ছবি যেনো এখন আমাদের সমাজ রাষ্ট্রের প্রতীক হয়ে না ওঠে, সেদিকে নজর দেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি। এই ধরণের ছবি যেনো বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা ও বিচারহীনতার চিত্র হিসেবে দেখা না দেয়, সেদিকে সংশ্লিষ্টরা নজর দেবেন বলে আমাদের আশাবাদ।