বাপজানের বায়োস্কোপের প্রথম টিজার যখন দেখি, তখনই ভাবি এই সিনেমা দেখতে হবে। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো বায়োস্কোপ এই সিনেমার একটা বড় অংশ। ছোট বেলায় মনে করতে পারা প্রথম সিনেমা দেখার পর থেকে বায়োস্কোপের মতো অতি পছন্দের জিনিস নিয়া সিনেমা দেখি নাই। সেই বায়োস্কোপ নিয়া সিনেমা হচ্ছে আমি দেখবো না তা হয় না।
প্রথম ও প্রধান কারণ ছাড়া আরও যেই কারণটা ছবি দেখতে আগ্রহী করে তুলছে তা হইলো সিনেমার ‘প্রেমের বাজার’ গানের দৃশ্যায়ন। মারকাট কিছু ধরনের না হইলেও সাধারণতঃ সিনেমা হলে গিয়ে যেসব ছবি দেখি, তার চেয়ে একটু অন্য আমেজের নির্মাণ। যা মোটেও বলিউডি ছবির ধারণাকে বাংলাদেশের হলে এস্টাব্লিশ করার মতো না। এই কারণেই আগ্রহ বাড়ে আমার।
ছবি মুক্তির আগের দিন সিনেমা সংশ্লিষ্ট খবর আর পেইজ ঘেঁটে যখন কোন কোন হলে ছবি মুক্তি পাচ্ছে নিশ্চিত হতে পারি না, তখন প্রথম দিন ছবি দেখার উত্তেজনা নষ্ট হবে এই ভয় পেয়ে বসে। কোনও উপায়ন্তর না দেখে পরিচালককে ফোন করে জানি সিনেমা হলের নাম। তিনি হয়তো বলেছিলেন নারায়ণগঞ্জের ‘পুনম’ সিনেমা হলের কথা। আমি ভেবে বসে আছি ‘পূর্ণিমা’ সিনেমা হল। তারপর আর আর যারা আমার সাথে বায়োস্কোপ দেখতে যাবে তাদের নিয়ে একটা বিভ্রান্তি। এই বিভ্রান্তি কাটিয়ে ঠিকই পৌঁছে যাই টিকাটুলির মোড়ের সিনেমা হল ‘অভিসার’-এ।
ছবির গল্পের প্রধান বিষয় বায়োস্কোপ ও মুক্তিযুদ্ধ। পরিচালক রিয়াজুল রিজু’র প্রথম সিনেমায় পর্দার পেছনের প্রথম হলেন ছবির চিত্রনাট্যকার মাসুম রেজা। মাসুম রেজা এমন একজন চিত্রনাট্যকার, যিনি বাংলাদেশের টিভি নাটকে অনেক চমৎকার চিত্রনাট্য উপহার দিয়েছেন। তাই মাসুম রেজা একসময় সিনেমার চিত্রনাট্য লিখবেন সেটা অনুমিতই ছিলো। সেই অনুমান বাস্তবে রূপায়ন করলো রিজু। ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ ছবিতে। আর ছবি সম্পর্কে প্রথম প্রশংসা করলে বলতে হবে ছবির চিত্রনাট্যই ছবিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। যা দর্শককে ধরে রাখছে ছবিটা শেষ করে উঠতে।
ছবির গল্পে যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ আছে, তাতে গোলাগুলি আর বিভৎসতা থাকবে এক প্রকার ধরে নিতে পারি আমরা। যদিও এর বাইরে যাওয়ার চেষ্টার সময় আমরা দেখেছি কোনও কোনও চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টাই অনেকটাই খেলো। তবে এখানে মুক্তিযুদ্ধ আসলে গল্পের পেছনের গল্প। তাই মূল গল্প বা চরিত্র হলো বায়োস্কোপ। যেই বায়োস্কোপ আমরা ছোটবেলায় দেখেছি বাস্তবে এখন দেখছি চলচ্চিত্রে। মজার বিষয় হচ্ছে আমি যতটা আগ্রহ নিয়ে হলে গেছি, ঠিক ততটা আগ্রহ নিয়েই আরও অনেক মানুষও হলে গেছে। বিষয়টা আসলেই মজার মনে হইছে আমার কাছে। এবং গল্পে যেই সংকটগুলো নির্মাতা দেখাইতে চাইছেন এই সংকটগুলো টিকাটুলির মোড়ের সিনেমা হলের দর্শক ঠিকই উপভোগ করতে পারছে। এইটা এই ছবির একটা বড় সাফল্য। একই রকম সাফল্যের লক্ষণ আমরা দেখছিলাম আবু শাহেদ ইমনের ‘জালালের গল্প’ ছবিতেও। মানুষ গল্পের ভেতর ঢুকতে পারছে। যা বাপজানের বায়োস্কোপ-এও বিদ্যমান।
ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে কাকে ধরবো? বায়োস্কোপ না বায়োস্কোপওয়ালা চরিত্রে অভিনয় করা শতাব্দী ওয়াদুদ? হাসেন মোল্লা চরিত্রে অভিনয় করা শতাব্দী ও জীবন সরকারের চরিত্রে অভিনয় করা শহীদুজ্জামান সেলিম অভিনয় করেছেন চমৎকার। তবে বরাবরই একটা বিষয়ের খটকা আমার কাটলো না, চর অঞ্চলের দিনমজুরের ফিটনেস যদি ঘাটতি থাকে তবে তাকে কতটুকু মানায়? হ্যাঁ, শতাব্দীর অভিনয় উপভোগ করলেও তার শরীরটা স্ক্রিনের বড্ড বেশি জায়গা দখল করে রেখেছে বলে সারাক্ষণই একটু উসখুস করে গেছে মন। আর একই যন্ত্রণা কাজ করেছে লং শটগুলোতে। যেগুলো ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সে নেয়া হলে সমান্তরাল একটা দূরবর্তী ফ্রেম আসতো, সেগুলো গো প্রো ব্যবহার করায় ফ্রেমের কোণা বেঁকে গেছে। অনেক সময় মনে হইছে ফিশআই ল্যান্সে। লং শট নেয়ার সময় এমন করায় ফ্রেম ব্যান্ড হয়ে যাওয়ায় সিনেমার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছি অনেকবারই।
এইসব অসঙ্গতিকে একপাশে রেখে দুই ঘন্টা দশ মিনিটের সিনেমা উপভোগই করেছি। আশা করবো ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ থেকে আরও ভালো সিনেমা রিয়াজুল রিজু বানাবেন। তার জন্য অগ্রিম সাধুবাদ।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের
নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে
প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। এ লেখাটির ভাষারীতিও লেখকের নিজস্ব)