এবারের অমর একুশে বইমেলায় ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করা নিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দিলেন নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন।
নিজের ফেসবুকে এই বিষয়ে তিনি একটি বড় পোস্ট দেন। সেখানে তসলিমা লিখেন, ‘একুশের বইমেলায় ব-দ্বীপ প্রকাশনীর যে স্টল ছিল, সেটিকে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে। বইটির লেখক-প্রকাশককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রগতিশীল হিসেবে খ্যাত মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘যে বইটির কারণে স্টলটি বন্ধ করা হয়েছে, সেটির কয়েকটি লাইন আমাদের বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান আমাকে পড়ে শুনিয়েছেন। আমি কয়েক লাইন শোনার পর আর সহ্য করতে পারি নি। এত অশ্লীল আর অশালীন লেখা। এই স্টলটিকে আর অন্য দশটি সাধারণ স্টলের সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। তিনি বলেন, আমি মনে করে লেখালেখির সময় কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে। যাতে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না আসে। আর যে বইটির বিষয়ে কথা হচ্ছে, আমার অনুরোধ কেউ যেন এই বইটি না পড়ে।’
এরপর তসলিমা নাসরিন আরো লিখেন, ‘খবরটি কিছু অনলাইন পত্রিকায় পেলাম, এমনকি ইত্তেফাকও ছাপিয়েছে এটি। সত্যি কী মিথ্যে জানি না। যদি সত্যিই উনি বলে থাকেন এসব, তবে ভয়ংকর কথাই বলেছেন। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত যেন না আসে, লেখার সময় লেখকদের বলেছেন সতর্ক থাকতে! মানুষের মত প্রকাশের অধিকারের চেয়ে ধর্মীয় অনুভূতির মূল্য বেশি দিচ্ছেন! ধর্মীয় মৌলবাদীরা, যারা নিজেদের ছাড়া অন্য কারও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, ঠিক এরকম কথা বলে। অবাক হলাম শুনে যে বইয়ের কয়েক লাইন শুনেই জাফর ইকবাল রায় দিয়ে দিয়েছেন, লেখাটি অশ্লীল আর অশালীন!
শ্লীল-অশ্লীল এই বিচার করতে গিয়ে তসলিমা নাসরিন লিখেন, কোন লেখা শ্লীল আর কোনটা অশ্লীল তা বিচার করবে কে শুনি! কোনও লেখা কারও কাছে অশ্লীল ঠেকে, কারও কাছে ঠেকে না। যে লেখে তার কাছে তার লেখা শ্লীল মনে হয় বলেই সম্ভবত লেখে। ধরা যাক, কোনও লেখকের কোনও লেখা সবার কাছে অশ্লীল আর অশালীন বলে মনে হচ্ছে, তাহলে কি লেখককে শাস্তি দিতে হবে? তার স্টল বন্ধ করে দিতে হবে? অশ্লীল লেখা লেখার অধিকার কি লেখকদের নেই? প্রকাশকদের কি অধিকার নেই অশ্লীল লেখা ছাপানোর? তাদের কি অধিকার নেই বইমেলায় স্টল দেওয়ার? পাঠকের কি অধিকার নেই অশ্লীল বই কেনার? অশালীন বই পড়ার?
এরপর এই লেখক আরো জোড় দিয়ে লিখেন, কে বলেছে বই লিখলে শ্লীল বই লিখতে হবে? মানুষের জীবন যাপন অশ্লীল, মানুষের চিন্তাভাবনা অশ্লীল, মানুষের বর্বরতা অশ্লীল,লোক ঠকানো, অপহরণ, ধর্ষণ, খুন সব অশ্লীল। অশ্লীল মানুষ নিয়ে লেখকরা অশ্লীল বই লিখতে পারবে না। আহ, আহলাদ দেখে বাঁচি না।
একটা অশ্লীল বই লেখার জন্য আমার হাত নিশপিশ করছে।’