নাসিরনগরে তাণ্ডবের পর সেখানকার এক তরুণ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন: ‘আমরা কোথায় যাবো? এখন তো মনে হচ্ছে আমরা এদেশের নাগরিক না। নাগরিক হলে অন্তত একটু নিরাপত্তা তো পেতাম। যখন নিরাপত্তা উঠে যাবে, তখন কী হবে? আমার তো মনে হয় না, আমরা এদেশে টিকতে পারবো। আমরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়ছি। আমরা কোথায় যাবো? প্রশাসন যদি নিরাপত্তা দিত, তাহলে কালকে আটটা বাড়িতে আগুন লাগে না। মন্দির পুড়ে না। কারা কী করছে আমরা কিছুই বলতে পারছি না। সবগুলোই অজ্ঞাত। আমরা কাউকেই চিনি না। এখন ঘরেও তো থাকতে পারছি না। রাতের অন্ধকারে কখন এসে আগুন দেয়। আমরা তো বলতে পারছি না, আমরা বাঁচবো, নাকি মরবো।’ তরুণটি এরকম ভীতিকর এক অবস্থার মধ্যে আছেন যে বিবিসিকে তিনি তার নাম প্রকাশ করতে না করেছেন। এরকম ভয়ের পরিবেশে শুধু ওই তরুণই নন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের সংখ্যালঘু সকলেই ভয়ার্ত এক পরিবেশের মধ্যে আছেন। আরো অনেক জায়গাতেই একই অবস্থা। কেউ যখন তার ধর্মীয় বিশ্বাস কিংবা জাতিগত পরিচয়ের কারণে শঙ্কার মধ্যে থাকেন, তখন বুঝতে হবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কোথাও না কোথাও পচন ধরেছে, রাষ্ট্র এবং সরকার কোথাও না কোথাও ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তবে আশার কথা যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দু:খজনক ঘটনার পর সরকার এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিচ্ছে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় আগের চেয়ে বেশি উদ্যোগী হয়েছে, কোথাও কোথাও দেখেছি সাধারণ মানুষ সংখ্যালঘুদের উপর হামলার চেষ্টাকারীদের প্রতিহত করেছে। এ মানুষেরাই আমাদের অাশাবাদী করে। এ ভূ-খণ্ডে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে দীর্ঘ ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সেটা অক্ষুণ্ন রাখতে শুভবুদ্ধির মানুষদের সম্মিলিত প্রতিরোধটা জরুরি। তবে তার জন্য যে শিক্ষা প্রয়োজন, প্রকৃত যে শিক্ষা, সেটা রাষ্ট্র ও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। প্রকৃত শিক্ষায় মানুষকে শিক্ষিত করতে পারলে মাঝেমধ্যে আমরা নাসিরনগরের মতো যে ঘটনাগুলো দেখি সেগুলোর চির অবসান সম্ভব।