ঢাকায় ২টি ও ঢাকার বাইরে ৪টি মিলিয়ে মোট ৬টি সিনেমা হলে শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’। ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাজ, ময়মনসিংহের ছায়াবানী সিনেমা, পাবনার রূপকথা সিনেমা, খুলনার লিবার্টি সিনেপ্লেক্স ও সিরাজদিখানের পিক্স সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে চলচ্চিত্রটি।
২০১১ সালের বইমেলায় প্রকাশিত অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস ‘আঁখি এবং আমরা কজন’ অবলম্বনে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এবং মনন প্রযোজিত সরকারী অনুদানের চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন ‘দীপু নম্বর টু’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘দূরত্ব’ খ্যাত নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। শিশুদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। হল সংখ্যায় কিছুটা হতাশ নির্মাতা বলেন, ‘সম্ভবত আমাদের দেশের হল মালিকদের ভালো সিনেমার প্রতি অনীহা রয়েছে। আর শিশুদের জন্য ছবি তো দূরের বিষয়। তবে এই দৃশ্যপট বদলাবে দ্রুত।’
‘আপনার ১১ তম চলচ্চিত্র এটি। তার মধ্যে শিশুদের নিয়ে নির্মিত চতুর্থ চলচ্চিত্র। প্রথমত শিশুদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের কারণ এবং দ্বিতীয়ত শুধু জাফর ইকবাল স্যারের গল্প নিয়ে কেন?’ ধীরে সুস্থে মোরশেদুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুরা আগামী দিনের পৃথিবী। তাদের মননে যদি শিল্প-সুন্দর এবং স্বদেশ গেঁথে না দিতে পারি শৈশবে, তবে যে কারণে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেটা পুরোপুরি বিফলে যাবে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। আমি আমার মত চেষ্টা করে যাচ্ছি শত সীমাবদ্ধতায়। ইমপ্রেস সব সময় আমার পাশে থেকেছে। এ চলচ্চিত্রেও থেকেছে। আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
একটু বিরতি নিয়ে মোরশেদুল ইসলাম দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এটার আসলে কোন কারণ নেই কেন শুধু জাফর ইকবালের উপন্যাস নিয়ে শিশুদের সিনেমা করছি? আসলে তার গল্প বলার ধরণ ভালো লাগে। যা শিশুদের সঙ্গে অনেক বেশি যায়। তবে আমাদের আরো অনেক শিশুদের উপন্যাস আছে। যা নিয়ে চলচ্চিত্র করা সম্ভব। শাহরিয়ার কবীরের ‘নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়’ নিয়ে চলচ্চিত্র করার ইচ্ছাটা এখনও আছে।’
গল্পের মূল চরিত্র আঁখি। যে অন্য শিশুদের চেয়ে একটু আলাদা। চোখে দেখতে পায় না। সাধারণ একটি স্কুলে পড়তে এসেছে সে। সেখানে তৈরী হয় তার অনেক বন্ধু। যার মধ্যে পাঁচ জন একটু আলাদা।যারা আঁখির সঙ্গে বান্দরবান যেতে পেরেছিল। তারা হল তিতু, মামুন, সুজন, শান্তা ও রিতু।
স্কুলের সবাই যখন টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলে, তখন আঁখি মাঠের পাশে বসে থাকে। অন্যদের চার-ছক্কায় মজা পায়। এটা দেখে আঁখির জন্য তিতু তৈরি করে দেয় একটি ‘ঝুনঝুন বল’। বলের শব্দ শুনে আঁখিও ব্যাটে বল লাগাতে পারে। একসময় ছক্কা মেরে জিতে যায় ক্রিকেট ম্যাচও। ম্যাচ জেতার আনন্দে আঁখির বাবা সবাইকে পাঠিয়ে দেন বান্দরবানে। তারপর ঘটতে থাকে যত ঘটনা। আঁখি ও তার বন্ধুরা পড়ে ডাকাত এবং মানবপাঁচারকারী কাদের বখসের খপ্পড়ে।
শিশু অভিনেতাদের প্রায় সবারই প্রথম চলচ্চিত্র এটি। আঁখি চরিত্রের শিশু শিল্পী জাহিন নওয়ার হক ইশার জন্য এটি প্রথম অভিনয়ের কাজ না হলেও চলচ্চিত্রে এবং কেন্দ্রীয় চরিত্রে এই প্রথম চ্যানেল আই অনলাইনকে সে বলে, ‘এত বড় সব অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি। যেমন সুবর্ণা আন্টি অনেক কিছু শিখিয়ে বলতেন বাসায় চর্চা করবে। তিনি বলেছিলেন, বাসায় পা মেপে চোখ বন্ধ কর চলতে। সেভাবেই করেছি।
শিশু শিল্পী সবার জন্য ছিল ছয় মাসের গ্রুমিং সেশন। গ্রুমিং সেশন বিষয়ে আঁখি চরিত্রের ইশা বলেন, আমি এর আগেও মোরশেদ আংকেলের সঙ্গে কাজ করেছি। সেগুলোর কথা আর মনে নেই। অনেক ছোট ছিলাম। কিন্তু গ্রুমিংয়ে যা শিখেছি তা সারা জীবন মনে থাকবে। আঁখির বাকী পাঁচ বন্ধুরও প্রায় একই কথা। গ্রুমিং এবং শিশু শিল্পীদের অভিনয় প্রসঙ্গে মোরশেদুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, শিশুরা সব সময় ভালো অভিনেতা। এটা আমি আমার প্রতি চলচ্চিত্রে দেখেছি। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। কেবল একটু ধরিয়ে দিলেই হয়।’
চলচ্চিত্রের মন্দ মানুষটিরে নাম কাদের বখস। যার মতে টাকা আয়ের সবচেয়ে সহজ উপায় অস্ত্র বিক্রি আর মানুষ পাচার। যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন আল মনসুর। ঢাকার রাস্তা ছেয়ে গিয়েছিল তাকে ধরার জন্য।শিশুদের চলচ্চিত্রে এটাই তার প্রথম কাজ। চ্যানেল আই অনলাইনকে সবার পরিচিত মুক্তিযোদ্ধ শিল্পী বেলাল ভাই ওরফে আল মনসুর বলেন, আমি দুই লটে কাজ করেছি। অনেকে আমাকে সে সময়ে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছে কোথায় আছি? আমি উত্তরে বলতাম বান্দরবান ঘুরতে এসেছি। অনেকটা ছুটির মুডে কাজ করেছি। যদিও কাজ করতে বেশ কষ্ট হয়েছে। বয়সতো আর কম হয়নি।তবে বাচ্চাগুলোর সঙ্গে সময়ও কেটেছে দারুণ।’
পুরু গোফের আড়াল থেকে আল মনসুর আরো বলেন, ‘শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র যত বাড়বে, সরকারী এবং বেসরকারী সহযোগিতা এবং প্রচারণা যত বাড়বে তত আমাদের দেশটা অন্ধকার থেকে দূরে সরবে। একজন মোরশেদ নয় আরো বেশ কয়েকজন মোরশেদুল ইসলামের দরকার। যারা শিশুদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবে।
ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, সুবর্ণা মুস্তাফা ও মুনিরা ইউসুফ মেমি।