শেষ পর্যন্ত কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্ত পৃথিবীর আলো-বাতাসে বুকভরে নিঃশ্বাস নিলেন একাত্তর বয়সী বৃদ্ধ আজমত আলী ওরফে মাস্টার। রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা পেয়েও গত প্রায় ১০ বছর কারাভোগ করে মঙ্গলবার মুক্তি পেয়েছেন তিনি।
মূলত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার অন্যতম এক দৃষ্টন্ত জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলা পাখিমারা গ্রামের এ বৃদ্ধ। অন্যের ভুলে তার জীবন থেকে মহামূল্যবান এই সময়কে হারিয়েছেন তিনি। তার সৌভাগ্য আপিল বিভাগ বিষয়টি আমলে নিয়েছিলেন। সেজন্যই মুক্তি মেলে। না হলে, হয়তো বাকী জীবনটা কারাগারেরই কাটাতে হতো।
অথচ আইনের স্বাভাবিক গতিতে সেই ১০ বছর আগেই মুক্তি পেতে পারতেন তিনি। কিন্তু ক্ষমতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকা দুষ্ট চক্রের খপ্পরে পড়েন আজমত আলী। আমরা জানতে পেয়েছি, ১৯৮৭ সালে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে একটি খুনের ঘটনায় অন্যদের সাথে আসামি হয়েছিলেন তিনি। দুই বছর পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তার। এর সাত বছর পর রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পান আজমত আলী। পাশাপাশি আপিলেও ২০০৫ সালে হাইকোর্ট তাকে খালাস দেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ক্ষমার কথা লুকিয়ে রাষ্ট্রপক্ষই আপিল বিভাগে যায়। আর তাতেই ২০০৯ সালে আজমতকে আবারও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
আপিল বিভাগ যেদিন আজমত আলীকে মুক্তির নির্দেশ দিয়ে রায় দেন, সেদিন দেশের সর্বোচ্চ আদালত দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির আদেশে সাজা মওকুফের পরও আজমত আলীকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক।’ আমরা দেখলাম, আজকে যখন তাকে জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হলো; সেখানকার জেল সুপার বললেন, ‘আজমত আলীর মুক্তিতে কারা কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট।’
কিন্তু শুধু দুঃখ প্রকাশ করে কিংবা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেই কি রাষ্ট্র তার দায় এড়াতে পারে? এই মহা অন্যায়ের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কি কোনো শাস্তি হবে না? এক বৃদ্ধের এই ক্ষতি রাষ্ট্র পূরণ করবে কিভাবে? এই ঘটনা যে ভুলক্রমে ঘটেছে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। কেননা এমন ঘটনার কথা আমরা প্রায়ই শুনছি। এই তো কিছুদিন আগেই জাহালমের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, একজন নিরপরাধ মানুষকেও বিনাঅপরাধে তিন বছর কারাগারে রাখা যায়।
জাহালমের সেই ঘটনা এদেশের আইনী ব্যবস্থাকে যেমন নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলে, ঠিক তেমনই আজমত আলীর ঘটনাও সেই প্রশ্নকেই আরো দৃঢ় করে। যার একটাই উত্তর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় বড় দুর্বলতার বলি হচ্ছেন জাহালম, আজমত আলী বা অন্য কেউ।
আমরা মনে করি, যারা এমন নিরীহ সাধারণ মানুষের জীবনের সুবর্ণ সময় কেড়ে নেয়; তাদেরকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া উচিত নয়। এসব ঘটনার কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে এর পুনরাবৃত্তি রোধ করতে। এছাড়া কোনো বিকল্প নেই।