‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন’ ‘আমেরিকাকে আবার মহান করুন’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ৭০ বছর বয়সী রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প। পেছনে ফেলেছেন: অভিবাসন নিয়ে তাঁর বিতর্কিত অবস্থান, তার প্রচারণার আক্রমণাত্মক ধরনসহ ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন সময় তার বিতর্কিত সব মন্তব্য।
ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়াটা বৈধ ছিল কিনা এ নিয়ে প্রথম উত্থাপন করে বিতর্ক সৃষ্টি; শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট! বলতে গেলে বিশ্বের সব থেকে ক্ষমতাধর ব্যক্তি! এখন প্রশ্ন কে এই ট্রাম্প? যাকে নিয়ে উত্তাল বিশ্ব মিডিয়া-
কে এই ডোনাল্ড ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইর্য়কের ধনকুবের ফ্রেড ট্রাম্পের চতুর্থ সন্তান ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাবা ছিলেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। তবে বাবার অগাধ অর্থ সম্পত্তি থাকা সত্বেও ট্রাম্পকে জীবন শুরু করতে হয়েছে বাবার প্রতিষ্ঠানের কেরানির কাজ দিয়ে। ছোট বেলা থেকেই সহপাঠীদের কাছে দুষ্টু ও উচ্ছৃঙ্খল বলে পরিচয় পান ট্রাম্প। উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই তাকে পরিবার থেকে পাঠানো হয়েছিলো সামরিক একাডেমিতে।
শিক্ষা জীবনে ট্রাম্প উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাবার চতুর্থ সন্তান হওয়ার পরও ফ্রেড ট্রাম্প তাকে উত্তরসূরী নির্বাচিত করে যান। কারণ, বড় ভাই জুনিয়র ফ্রেড পাইলট হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অবশ্য, মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই জুনিয়র ফ্রেড মদ্য পানের কারণে মারা যান। সেই অভিজ্ঞতা থেকে জীবনে মদ ও সিগারেট ছোঁননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বাবার প্রতিষ্ঠানে চাকুরি শুরুর আগেই ট্রাম্প দশ লাখ ডলারে ঋণ নিয়ে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা শুরু করেন। আস্তে আস্তে ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে ট্রাম্প তার বাবার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন। প্রতিষ্ঠা করেন ট্রাম্প অর্গানাইজেশন। ১৯৯৯ সালে সিনিয়র ট্রাম্প মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প তার বাবা ফ্রেডকে অনুপ্রেরণা মানেন।
তবে একটা সময় তিনি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছিলেন! অসংখ্য হোটেল ও জুয়ার ক্যাসিনোতে লস দেখিয়ে তিনি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন। বিনোদন ব্যবসাতেও তিনি নিজস্ব রাজত্ব গড়ে তোলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মিস ইউনিভার্স, মিস ইউএসএ সহ বিভিন্ন সুন্দরী প্রতিযোগিতার মালিক ছিলেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, বিশ্বজুড়ে তাঁর থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মোট মূল্যমান ১০ বিলিয়ন ডলার হবে। ট্রাম্পের দাবির সত্যতা জানার একমাত্র উপায় তাঁর সবশেষ আয়কর হিসাব। কিন্তু আয়কর হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করতে ট্রাম্প গররাজি।
ট্রাম্পের বৈবাহিক জীবন: ব্যক্তি জীবনে ট্রাম্প তিনটি বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ইভানা জেলনিকোভা। সাবেক চেক অ্যাথলেট এবং মডেল। ১৯৯০ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। জেলনিকোভা’র ঘরে ট্রাম্পের তিন সন্তান রয়েছে।
এরপর ১৯৯৩ সালে এসে তিনি মরলা মেপলসের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৯৯ সালে তার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় ট্রাম্পের। মরলার ঘরে ট্রাম্পের একটি কন্য সন্তান রয়েছে। সর্বশেষ ট্রাম্প বিয়ে করেন মেলানিয়া ক্নাউসকে। যিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রার্থীতা: ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন সর্বপ্রথম ১৯৮৭ সালে। মূলত প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নামা ২০০০ সালে। ২০০৮ সালে আলোচনায় আসেন-বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা রাখেন কিনা প্রশ্ন রেখে।
২০১৫ সালে ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে নমিনেশনে লড়াইয়ে নামেন। সকল বিকর্তকে পেছনে ফেলে প্রতিদ্বন্দ্বী টেড ক্রুজ এবং মার্কো রুবিওকে টপকে রিপাবলিকান মনোনয়ন লাভে সমর্থ হন। এরপর বাকিটা ইতিহাস।