বাগেরহাটের রাজাকার কসাই সিরাজকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গণহত্যা, হত্যার ৫ অভিযোগ নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হওয়ায় ওই দণ্ড দেওয়া হয়। আর হত্যা নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অপর আসামী খান আকরাম হোসেনকে দেওয়া হয় আমৃত্যুকারাদণ্ডাদেশ।
বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার দেড় মাস পর বাগেরহাটের রাজাকার সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাষ্টার ওরফে কসাই সিরাজ এবং খান আকরাম হোসেনের মামলার রায় ঘোষণার সময়ে ট্রাইব্যুনালের ভেতরে বাইরে ছিল স্বাভাবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আসামীদেরকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। আদালত বেলা ১১টায় ১৩৩ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পড়া শুরু করেন। ওই সময়ে ট্রাইব্যুনালের নির্ধারিত স্থানে রাখা কাঠের চেয়ারে বসা ছিলো আসামী কসাই সিরাজ ও খান আকরাম হোসেন।
রায়ে আসামী সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ দেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, আসামী সিরাজুল হক সম্পর্কে বলা হয়েছে, যে এমনভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে যে তাকে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কিছু দেওয়া যাবে না। সে ছয় থেকে সাত’শ মানুষকে যারা শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো তাদের সবাইকে নিজে এবং সহযোগীদের দ্বারা হত্যা করেছে। ৪২ জন মানুষকে একসঙ্গে হত্যা করেছে।
প্রথমে ৭ অভিযোগ পর্যালোচনা করেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক, পরে আসামীদের অপরাধ ও তাদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। আসামীদেরকে কোন অপরাধে কি শাস্তি দেওয়া হলো তা ঘোষণা করেন প্রথম ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ইনায়েতুর রহিম।
প্রসিকিউটর ব্যরিস্টার সায়েদুল হক সুমন আরো বলেন, সিরাজ কসাইয়ের বিরুদ্ধে ৬টি চার্জ এনেছি আমরা। হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ যতগুলো মানবতাবিরোধী অভিযোগ আছে সবগুলোই আমরা নিয়ে এনেছিলাম। তার মধ্যে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল ৫টি অভিযোগেই তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। আর একটি চার্জে খান আকরাম হোসেনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছেন, সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যমকর করা হবে। গুলি করেও তার মৃত্যু কার্যকর করা যাবে আবার ফাঁসি দিয়েও। তবে আবদুল লতীফ তালুকদার রায় ঘোষণার আগে মারা যাওয়া তার নাম বাদ দেওয়া হয়।
প্রত্যাশিত রায় পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানায় আসামীপক্ষ।
কসাই সিরাজের আইনজীবী আবুল হাসান বলেন, ফজলুল হক শিকদার মার্ডার কেসে আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। আশা করি আপিলে ন্যায় বিচার পাবো।
খান আকরাম হোসেনের আইনজীবী এম সরওয়ার হোসেন বলেন, এই রায় তাকে ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে দিতে পারেনি। তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করেছে। বাগেরহাটের স্থানীয় রাজাকার কসাই সিরাজ ও খান আকরাম হোসেন আটক থাকায় আইন অনুযায়ী রায় ঘোষণার দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তাদেরকে আপীল করতে হবে।