যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের রক্ষায় মঙ্গলবার এক যুগান্তকারী এবং সাহসী সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। আগের দিন সার্কুলার জারি করে সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী-শিশুর জবানবন্দি নেওয়ার দায়িত্ব নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রধান বিচারপতির আদেশে সারাদেশের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি এই নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘সুপ্রিম কোর্টের ‘স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মস’র গোচরীভূত হয়েছে, বর্তমানে বেশকিছু ক্ষেত্রে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারী বা শিশুদের জবানবন্দি পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। এতে নারী-শিশু ভিক্টিম ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দিতে সংকোচবোধ করে। সে জন্য তারা ঘটনার প্রকৃত বিবরণ দিতে অনেক সময় ইতস্তত বোধ করে।’
আমরা জানি, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’ আইন অনুসারে বর্ণিত অপরাধ সংঘটনে ওয়াকিবহাল ব্যক্তির জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়। যা ওই অপরাধ তদন্ত ও বিচারের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্ট মনে করছেন, নতুন এই নির্দেশনার ফলে যৌন নির্যাতনের শিকার নারী-শিশু সহজে ও নিঃসঙ্কোচে নির্যাতনের বর্ণনা দিতে পারবে।
এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, এই সিদ্ধান্ত খুবই সুচিন্তিত ও সময়োপযোগী। দেশে নারী-শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতনের যে মহামারি চলছে, তার পেছনে অন্যতম কারণ হলো অপরাধ করেও আইনে ফাঁক গলে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সঠিক বিচার না হওয়া এবং সামাজিক হয়রানি বা লোকলজ্জার ভয়ও বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু সেই অচলায়তনকে তো ভাঙতেই হবে। এসব কারণে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ নারী-শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতন বা যৌন সন্ত্রাস চলতে পারে না। এই মহামারিকে থামতে হবে। এ জন্য নারী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্যাতিতার জবানবন্দি দেয়ার সুযোগের পাশাপাশি অন্য যে বিষয়গুলো আছে, তাও বিবেবচনায় আনতে হবে।
আমরা মনে করি, সার্বিকভাবে নারী-শিশুর বিরুদ্ধে যে যৌন নির্যাতন; তা অনেকাংশেই বন্ধ করা সম্ভব আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে।