বইমেলার পর ‘এই সময়ে’ (যে সময় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের, যে সময় লেখক ও পাঠকের অভাবের) বই বাণিজ্য কঠিন হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। বিশ্ব বই দিবসে এমনই এক বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিলেন তারা।
নানা আয়োজনে ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবসে হিসেবে পালিত হয়। বইকে নিয়ে এমন বিশেষ দিনে এসে সেই বই বাণিজ্যের নানা সংকটের কথা জানালেন প্রকাশকরা। কোন কোন কারণে বই বাণিজ্য কঠিন হয়ে উঠছে সেই তথ্য তুলে ধরলেন চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে। পাশাপাশি পরামর্শ দিলেন; কিভাবে পাঠককে বইয়ের দিকে আরো বেশি করে টানা যায়।
প্রকাশনা সংস্থা বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ বলেন, বই বাণিজ্য বাড়াতে হলে বাড়াতে হবে পাঠকের সংখ্যা। আমাদের দেশে এত এত মানুষ কিন্তু পাঠক খুবই কম। সেদিকটাতেই নজর দিলে সমস্যার সমাধান আসবে। সেজন্য দেশে লাইব্রেরির সংখ্যা বাড়াতে হবে। জেলা পর্যায়ে, উপজেলা পর্যায়ে ও স্কুল পর্যায়ে লাইব্রেরি আরো বাড়াতে হবে। সঙ্গে যেসব দুর্বল লাইব্রেরি আছে সেগুলো আরো বেশি শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
তিনি যোগ করেন, দেশে যদি পাঠক তৈরি হয় তাহলে অনেক লেখক লেখালেখিকেই নিজেদের পেশা হিসেবে নিতে পারবে। তাহলে লেখক, পাঠক ও প্রকাশক সবাই একাধারে উপকৃত হবে।
দেশে পাঠক সংখ্যা আরো বাড়লে বাতিঘরের মতো উদ্যোগগুলো বাড়বে বলে মনে করেন দীপঙ্কর দাশ।
শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবীন আহসান বলেন, এই সময়ের পাঠক তৈরিতে প্রধান সমস্যা হলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। এখনকার তরুণ পাঠকরা বেশিরভাগ সময় কাটায় ইউটিউব ও ফেসবুকে। ফলে তাদের মধ্যে বই পড়ার তেমন আগ্রহ গড়ে উঠছে না। আর পাঠক কমছে মানেই, বই বিক্রি কমছে। তাতেই কমছে বাণিজ্য।
তরুণ ও স্কুলগামী শিশুদের বই বেশি বেশি পড়ানো উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখনকার তরুণরা বেশিরভাগ সময়ই মোবাইলে থাকছে । বই পড়ার অভ্যাসই তাদের গড়ে উঠছে না। বই পাঠের অভ্যাস না থাকলে বই বিক্রি হবে কি করে?
বই পাঠের অভ্যাস না তৈরি হলে বই বাণিজ্য বাড়বে না উল্লেখ করে রবীন আহসান বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভালো কাজের উদাহরণ খুবই কম আছে। সেখানে প্রতিহিংসার জায়গাই বেশি তৈরি হয়। ফলে বাড়ছে ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা। এসবের অনেকগুলো কারণের একটি হচ্ছে বই পাঠ না করা।
‘মানুষ হিসেবেও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতা কমে যাচ্ছে।ছেলে-মেয়েদের মধ্যে স্বপ্ন দেখার প্রবণতাও কমে যাচ্ছে। আগে আমরা বই পড়তাম আর চিন্তা করতাম। লেখক একভাবে লিখতেন আর পাঠক আরেকভাবে সেটা চিন্তা করতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সেই সুযোগও দিচ্ছে না। সাহিত্য তো আর ধরে ধরে ক্লাস নয়। এখনকার তরুণরাও সাহিত্য বিমুখ।’
তবে বই পাঠের চর্চা তৈরি করার জন্য লেখক, পাঠক ও গণমাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন এই প্রকাশক। বলেন, সঙ্গে সরকারকেও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ডিজিটাল দেশ গড়তে হবে তবে সেটা করতে গিয়ে তরুণরা বইবিমুখ হয়ে যাচ্ছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
দেশ পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী অচিন্ত্য চয়ন বলেন, বইমেলার মাসের সঙ্গে পুরো বছরের বই বিক্রির পরিমাণ অনুপাত করতে গেলে দাঁড়াবে ১০০:৫। এভাবেই কমছে বই বাণিজ্যের পরিমাণ। তবে পাঠকের কাছে বই পৌঁছাতে মার্কেটিং পলিসি নির্ধারণ করা জরুরি। সেটার মধ্যে দিয়ে নির্ধোরণ করতে হবে কিভাবে পাঠকের পাছে বই পৌঁছানো হবে। লেখক, পাঠক, প্রকাশক, সরকার ও গণমাধ্যম মিলে এই পলিসিটা গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য আমরা আলোচনা শুরু করার উদ্যোগটা এখনই নিতে পারি।
যান্ত্রিক সময়ে বইকেই পাঠকের কাছে যেতে হবে উল্লেখ করে এই প্রকাশক বলেন, এখন পাঠকের এমনও সময় থাকে না যে তারা খুঁজে নিয়ে বই পড়বে। সেজন্য বইকেই পাঠকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির মতো উদ্যোগ বেশ কার্যকর হয়ে উঠবে সামনের দিনগুলোতে।