বাংলাদেশীদের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনার শেষ নেই। ক্রিকেট পাগল বাঙালীর কাছে মাঠে বসে খেলা দেখার আগ্রহও নেহাত কম নয়। এবং সেই উন্মাদনা সব ধরনের মানুষের মধ্যে। সেই বিষয় নিয়েই ফেসবুকে পোস্ট দিলেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার।
এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, ক্রিকেট খেলা দেখতে গিয়ে আমি খুব কমই বাংলাদেশ দলকে হারতে দেখেছি। আমি মাঠে গেলে বাংলাদেশ সাধারণত জেতে। অধিকাংশ সময় আমি আমার ছেলেকে নিয়ে খেলা দেখতে যাই। আমার পুত্র বিশেষ শিশু। সে ক্রিকেটের ভীষণ ভক্ত। তার কল্পিত পৃথিবীতে সে সাকিব, মাশরাফি, ধোনি, শচিনকে তার বন্ধু মনে করে। নিজে নিজে খেলার কমেন্ট্রি দেয়।
নিজের পরিচয় দেয় ..আই অ্যাম …..ফ্রেন্ড অফ শাকিব, মাশরাফি, মুশফিক অ্যান্ড এম এস ধোনি। আমি তাকে নিয়ে ফতুল্লাতেও খেলা দেখতে গেছি। তার মন ভালো করার জন্য মাঝে মাঝে আমি তাকে যখন খেলা চলে না, তখন স্টেডিয়ামে বেড়াতে নিয়ে যাই।
এরপর স্টেডিয়ামের নানান ভুল-ত্রুটির কথা উল্লেখ করে আব্দুন নূর তুষার লিখেন, কিন্তু এই স্টেডিয়াম বড় নির্দয় এক স্থাপত্যকর্ম। এখানে বিশেষ মানুষদের জন্য কোনো আলাদা ব্যবস্থা নাই।
যাদের ক্রাচ বা হুইল চেয়ার লাগে, তাদের জন্য কোন এস্কেলেটর, লিফ্ট বা আলাদা গ্যালারী নাই। হুইলচেয়ার নিয়ে যাবার মতো আলাদা কোনো বাথরুম নাই। হুইলচেয়ার নিয়ে ওঠা নামার জন্য কোনো স্লোপ বা র্যাম্পও নাই।
এই স্টেডিয়াম শারীরিক প্রতিবন্ধী অথবা অটিস্টিকদের জন্য খেলা দেখার সুযোগ দিতে চায় না। ক্রিকেট খেলা দেখতে আমার ছেলে যেতে পারে, কারণ সে হাই ফাংশনিং। তাকে নিয়ে সেই ছোটবেলা থেকে আমি ও আমার পরিবারের সবাই সবখানে যাই ।
বিদেশে গেলে সে বাসে চড়ে। নিজে নিজে শপিং মল বা স্টেডিয়ামের ওয়াশরুম ব্যবহার করে। ভেন্ডিং মেশিন থেকে কয়েন দিয়ে কোক পেপসি চিপস কিনে আনে। ফুটপাথ ধরে হেঁটে যায়। কিন্তু এই স্টেডিয়ামে তার কষ্ট হয়।
এরপরে এমন অন্যান্য বিশেষ শিশুদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দেশে সবার আমার মতো সৌভাগ্য নাই।
সবার গাড়ী নাই। আমার মত জনপরিচিতিও নাই্। আমি তাই নানাভাবে চেষ্টা করে তাকে নিয়ে সময় পেলেই খেলা দেখতে যাই।
কিন্তু যাদের গাড়ী নাই, স্টেডিয়ামে বাসে করে যেতে হলে, বাসে শিশু ও শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জড মানুষদের জন্য কোনো অগ্রাধিকার আসন নাই। সিএনজিতে ভাড়া এত বেশী যে তারা সেটা বহন করতে হিমসিম খান। এই শহরে হুইলচেয়ার নিয়ে বাসে ওঠার কোনো ব্যবস্থা নাই।
দেশ ডিজিটাল হয়। মধ্য আয় হয়। বিদ্যুত দিয়ে আলোকিত হয়। ডলার পাউন্ড এর গল্প হয়। ফ্লাইওভার দিয়ে শহর অন্ধকার হয়ে যায়।
আমি এক অক্ষম পিতা, আমার মতো আরো পিতাদের দু:খ বুকে নিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ভাবি, এই শহর আমার পুত্রের জন্য না। এই রাস্তা আমার পুত্রের জন্য না। এই ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আমাদের বিশেষভাবে জন্মপ্রাপ্ত পুত্র-কন্যাদের জন্য না।
এই অমানবিক নির্দয় নির্মম স্থাপত্যকর্মকে আমি অভিশাপ দেই। যা কেবল ইট কাঠ আর লোহা দিয়ে তৈরি, যেখানে মানুষ এর প্রতি মমতা নাই।
অবশেষে তিনি মানুষের কথা টেনে বলেন, কিন্তু মানুষ বড় মমতাময়। আমার ছেলে প্রতিটা আউট আর চার ছক্কায় অপরিচিত আংকেল আর আন্টিদের সাথে হাই ফাইভ করেছে, মেক্সিকান ওয়েভ দিয়েছে। তাকে একজনও অন্য চোখে দেখে নাই। তার আসনটি দখল করে ছিল যে যুবক, সে তার দলবল নিয়ে আসন ছেড়ে গেছে।