স্বাধীনতার ৪৮তম দিবস পালনে প্রস্তুত বাংলাদেশ। নানা আয়োজনে লাল-সবুজ পতাকা অর্জনের সেই সূচনালগ্নকে স্মরণ করবে জাতি। আমরা জানি, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ইয়াহিয়া খান ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছিল। তবে সেই কালরাতে পাক বাহিনার ভয়ংকর হিংস্রতা আর হত্যাযজ্ঞের মুখেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করে বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছে। বিশ্ব মানচিত্রে পরিচয় পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই ৪৭ বছর শেষে জাতি হিসেবে আমরা কী পেয়েছি? তথ্য-উপাত্ত বা পরিসংখ্যানে হয়তো খুব সহজেই এরই প্রশ্নের জবাব দেয়া যাবে না। তবে বাংলাদেশের ঘোর শত্রুও স্বীকার করবে, নিজের এই বয়সে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে এ দেশ। যার সর্বশেষ নজির স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন। যা বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক অবস্থানকে বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড় করিয়েছে, যদিও তিন বছর আগেই বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। অনেকেই অস্বীকার করতে পারবে না, কিছু কিছু অর্জনে বিশ্বের অনেক দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচন, স্যানিটেশন, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষতায়নে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। যে দেশকে একদিন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলা হয়েছিল, সেই দেশই এখন ধান উৎপাদনে বৈশ্বিক গড়কে পেছনে ফেলেছে। শুধু ধানেই নয়, গম ও ভুট্টা উৎপাদনেও এগিয়ে বাংলাদেশ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হারে সারা বিশ্বে এখন প্রথম, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম আর পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। শুধু তাই নয়, মাছ উৎপাদনেও বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। তবে এসব অর্জনকেও ম্লান করে দেয়ার মতো অনেক বিষয় এ দেশে আছে। বিশেষ করে দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার নিশ্চিতের মতো বিষয়গুলো এই অর্জনগুলোকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। কিছু কিছু বিষয় অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এমন বাস্তবতার পরও বাংলাদেশের এই অর্জনে আমরা গর্বিত। সকলকে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা। লাখো শহীদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।