নির্মাণাধীন একটি ভবন এর সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময়ে মাথায় ইট পড়ে গুরুতর আহত হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আখিদুল ইসলাম। সে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউডা) চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
গত ১৪ জুলাই মোহাম্মদীয়া হাউজিং এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের নীচ দিয়ে হেঁটে যাবার সময়ে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। আইসিইউতে ৪৮ ঘন্টার বেশি কোমায় থাকার পর চোখ মেলেছে আখি, তবে শঙ্কা কাটেনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, লাইফ সার্পোট খুলে ফেলা হলেও যেকোনো মুর্হুতে লাইফ সার্পোটের প্রয়োজন হতে পারে।স্বজন ও বন্ধুরা চাচ্ছেন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠুক আখি, আবার ক্যাম্পাসে যেন আখির হাসিমুখ দেখতে পায় তার বন্ধুরা।
আখিদুলের চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন বিদেশী নিউরো সার্জারি বিশেষজ্ঞ জর্জ চাকো। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এখনো শঙ্কামুক্ত নয় আখিদুল। তাকে লাইফ সাপোর্ট খুলে সোমবার বিকেলের দিকে তাকে ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) থেকে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, পরে অবস্থা খারাপ হলে তাকে আবার আইসিইউতে নেওয়া হয়।তার ফুসফুসে ইনফেকশন পাওয়া গেছে। নিউমোনিয়াও ধরা পড়েছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে স্বয়ার হাসপাতালের আইসিইউ করিডোরের সামনে উদ্বিগ্ন অবস্থায় দেখা যায় আখিদুলের স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের।
আখিদুলের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু শুভ্র তালুকদার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আখি মেঝ, নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই চালাতো, চিত্রকর হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল সে। ক্যাম্পাসের হাসিমুখ বলতে আমরা আখিকে বুঝতাম।ওই দিন একটা বেসরকারী চারুকলা প্রতিষ্ঠানে নিজের চাকরির পাকা কথা দিতে যাচ্ছিল ও, আর তখনই ঘটে দুর্ঘটনা।
আখিদুলের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন জানিয়ে আরেক বন্ধু অরণ্য চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: যাদের খামখেয়ালির জন্য আজ আঁখির এই অবস্থা, আমাদের দুঃসময়ে তারাও পাশে দাঁড়িয়েছে। ওরা আমাদের ৫ লাখ টাকা দিয়েছে, তবে আখিদুলের চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা দরকার। আমরা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আখির জন্য ফান্ড গঠন করেছি।আমাদের দেশে যারা সম্পদশালী, বিত্তবান তাদের আখির পাশে এসে দাঁড়ানো সাহায্যের আবেদন করছি।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে আখিদুলের দুলাভাই চিত্রশিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: তার বাম চোখ পার্মানেন্টলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে বলে চিকিৎসকের আশঙ্কা করছেন। চিকিৎসকরা এখন তার মাথার আঘাতের বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। মাথায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তার গলার হাড় কাজ করছে না,ফলে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।
‘গতকালই হালকা একটু কথা হয়েছিল আখিদুলের সঙ্গে, ও আমাকে চিনতে পেরেছে, কিন্তু ও বাম চোখে দেখতে পারছে না, কানেও শুনতে পারছে না এইটুকু শুধু বলল’ ছোটভাইয়ের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এমনটাই জানালেন বোন নাসরিন হোসেন।
তিনি বলেন: চিকিৎসকরা আশা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছিল, কিন্তু ও অল্প বয়সী হওয়ার এ যাত্রায় বেঁচে গেছে।আমার ভাই দ্রুত ভালো হয়ে ফিরে আসুক এটাই এখন আমার চাওয়া।
এ ঘটনায় আখিদুলের বড়বোন নাসরিন হোসেন মোহাম্মদপুর থানায় একটি অভিযোগ করলে ওই বাড়ির মালিক মো.মোশাররফ হোসেন ও তার ছেলে ফয়সালকে আটক করে পুলিশ। পরে আখিদুলের চিকিৎসায় আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন মীর চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: অসচেতনার জন্যই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা বাড়ির মালিক ও তার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিলাম।ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে চাইলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।