বাংলাদেশ ফুটবল ডুবেছে বহু আগেই। অন্ধকার কানাগলির সবটুকু দেখে এখন ভেসে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টায়। নতুন কোচ এসেছেন। চলছে জোড় প্রস্তুতি। তবে অনুশীলনটা ঘাম ঝরানো হতে থাকলেও জাতীয় দল যে গুছিয়ে ওঠা থেকে অনেকদূরে, সেটিই সামনে এল আরেকবার! শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের গড়া একটি দুর্বল একাদশের বিপক্ষেও বিবর্ণ প্রদর্শনী দেখিয়েছে জামাল-মামুনুলদের দল।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) প্রস্তুতি ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল।
এশিয়ান গেমস নাকের ডগায়। সেজন্যই প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। দেশে তো ঘাম ঝরানো চলছেই, আরও কঠোর প্রস্তুতি নিতে কাতারে দুই সপ্তাহের ক্যাম্প করে এসেছে জাতীয় দল। সবমিলিয়ে প্রায় এক মাসের প্রস্তুতি পর্বের পর প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে নামে।
ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল জাতীয় দলই, বিপলু আহমেদের গোলে। পরের গোলটিও তাদের। তবে আত্মঘাতী। প্রথমার্ধের শেষধাপে রহমত মিয়া নিজেদের জালে বল জড়ালে সমতায় ফেরে শেখ জামাল। ম্যাচে গোলের দেখা ওই পর্যন্তই।
ম্যাচে হারেনি। জেতেওনি। তবে হার-জিত একপাশে সরিয়ে রেখে আলোচনা, দল হিসেবে কেমন প্রদর্শনী রাখল জাতীয় দল? সেই আলোচনায় কোনো সন্তুষ্টির উপসংহার টানার সুযোগ নেই। মাঠের খেলায় অগোছালো ও দল হয়ে উঠতে না পারার ছাপ স্পষ্ট!
সেটা খোলাসা করতে তাকাতে হবে শেখ জামালের দিকে। কেমন দল নামিয়েছিল তারা? সোজাকথায় একেবারে আনকোরা! শেখ জামালে ছিল না বড় কোনো নাম। পুরনোদের মধ্যে গাম্বিয়ান সলোমন কিং। সঙ্গে ট্রায়াল দিতে আসা নতুন দুই বিদেশি। আর ঘরোয়াতে তল খুঁজে পেতে চেষ্টায় থাকা আনকোরা কিছু মুখ!
সেখানে জাতীয় দলে ছিলেন না কে? জামাল ভুঁইয়া, মামুনুল ইসলাম, ইমন বাবু, তপু বর্মণ, বাদশা, মানিক, বিপলু আহমেদ, রহমত মিয়ারা সবাই ছিলেন। যাদের উপর ভর করে এশিয়ান ও সাফে সাফল্যের পথ খুঁজে পেতে মরিয়া লাল-সবুজরা। ঘুরেফিরে সবাইকে পরখ করে নেয়ার প্রস্তুতি ম্যাচে জামালের নেতৃত্বে এশিয়ান গেমসের সম্ভাব্য একাদশটাও মাঠে নামিয়েছিলের নতুন কোচ জেমি। তার শিষ্যরা কুলিয়ে উঠতে পারেননি!
ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা-পালেমবাংয়ে বসতে যাওয়া এশিয়ান গেমসের আগে খুব বেশি সময় নেই। আসর শুরু ১৪ অগাস্ট। অংশ নেবে ২৬টি দল। ছয় গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে দলগুলো। বাংলাদেশ আছে বি-গ্রুপে। গ্রুপ সঙ্গীদের মধ্যে আছে আগামী বিশ্বকাপের স্বাগতিক কাতার, উজবেকিস্তান ও থাইল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দল।
এশিয়ানে নেমে পড়ার আগে অবশ্য আরও প্রস্তুতির সুযোগ থাকছে। শুক্রবার রাতেই সাউথ কোরিয়ার উদ্দেশ্য রওনা হচ্ছেন মামুনুল-তপু-জামালরা। অনুশীলনের সঙ্গে সেখানে কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবেন তারা। এশিয়ান গেমস খেলতে সেখান থেকেই সরাসরি ইন্দোনেশিয়ায় যাবে জাতীয় দল।
প্রস্তুতির সঙ্গে দল হয়ে এক সুতোয় মালা গাঁথার উপযোগী হওয়াটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ জাতীয় দলের জন্য। মাঠের পারফরম্যান্সেও সেটা টেনে আনতে হবে। নয়তো অন্ধকারে তলিয়ে থাকা বাংলাদেশ ফুটবলে প্রাণের সঞ্চার হবে না সহসাই। আশার সলতেটা যদি একটু একটু করে উজ্জ্বল হতে না থাকে, দুপ করে নিভিয়েও যেতে পারে যেকোনো মুহূর্তে! তাতে আরও অন্ধকার। আরও গভীরে তলিয়ে যাওয়া। গভীরতর সেই অন্ধকারে নতুন করে ডুবে যাওয়ার আগে জামাল-মামুনুলরা দেশের ফুটবলকে টেনে তুলবেন, সে আশাটুকু রেখে প্রহর গোণাই এখন সময়ের এফোঁড়!