বৈশাখ আসতেই বেড়ে গেছে সূর্যের তেজ! সোমবার দিনের তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৫ ডিগ্রিতে। দাবদাহ আরও কয়েকদিন থাকবে বলেই জানাচ্ছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস। প্রচণ্ড গরমে যখন সবার হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন চারদিনের ম্যাচ খেলতে নামবেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-মুমিনুলরা। মঙ্গলবার যে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) পঞ্চম রাউন্ড।
সোমবার মিরপুরের একাডেমি মাঠে অনুশীলন করেছে কাপালি-লিটন-মুমিনুলদের ইস্ট জোন। মুশফিক-নাঈমদের নর্থ জোনের বিপক্ষে তাদের ম্যাচ শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। এই গরমে খেললে ক্রিকেটারদের কী অবস্থা হতে পারে তার পূর্বাভাস মিলল অনুশীলন দেখেই।
সকালে রানিং করতে গিয়েই পরিস্থিতি ওষ্ঠাগত হওয়ার যোগাড় ক্রিকেটারদের। নেটে যখন ব্যাটিং অনুশীলনে মুমিনুল-কাপালিরা, খুব কাছেই পানির বোতল। একটু পরপর বোতলে চুমুক দিতে হচ্ছে তাদের। পরক্ষণেই আবার ব্যাটিংয়ে। পেস বোলারদের অবস্থা তো আরও করুণ। বোলিংয়ে হাঁপাচ্ছিলেন রাহী, খালেদ, সোহাগ গাজীরা। বোলিং প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অসংখ্য পানির বোতল। টিম সহকারী প্রস্তুত তরমুজ, ডাব, কলা, পেয়ারা নিয়ে।
খেলোয়াড়দের জন্য যা যা দরকার, সবই পাচ্ছেন বলে ইস্ট জোনের কোচ সারোয়ার ইমরান স্বস্তির কথা জানালেন, ‘আমাদের এখানে সুযোগ-সুবিধা যা আছে, যেকোনো ধরনের খাবার যখন যেটা দরকার সরবরাহ করা হচ্ছে। ইস্ট জোন ওভাবেই টিমটা সামলাচ্ছে এবং আমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে। জাতীয় দল, বিপিএলে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকে, আমরা তাই পাচ্ছি।’
মাথার উপর সূর্যের তেজ রেখেই বিসিএল খেলতে হবে ক্রিকেটারদের। ইনজুরি এড়াতে বাড়তি কিছু কাজ করতে হবে বলে জানাচ্ছেন ইস্ট জোনের কোচ। মঙ্গলবার রাজশাহীর কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে অন্য ম্যাচে নাফীস-তুষার-বিজয়দের সাউথ জোনের মুখোমুখি মাহমুদউল্লাহ-রকিবুল-আশরাফুলদের সেন্ট্রাল জোন।
দুই ম্যাচে খেলতে নামবেন দেশের ৪৪ জন শীর্ষ ক্রিকেটার। খেলোয়াড়দের জন্য প্রেসক্রিপশন হিসেবে অভিজ্ঞ কোচ সারোয়ার ইমরান বলছেন, ‘আমার মনে হয় পেস বোলারদের নিজেদের বেশি যত্ন নেয়া উচিত। প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যান যারা রান বেশি করছে, তাদের আইসবাথ থেকে শুরু করে হাইড্রেশন, সব করা উচিত। প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় করা উচিত। দুই-তিন ঘণ্টা পার হওয়ার পর করলে আমার মনে হয় এই গরমে অসুস্থ হয়ে পরের ম্যাচগুলো খেলতে পারবে না।’
বিসিএল মাঠে গড়িয়েছিল শীতের মৌসুমে। জানুয়ারিতে তিন রাউন্ড হওয়ার পর প্রিমিয়ার লিগের জন্য আড়াই মাস বিরতি। অবশিষ্ট তিন রাউন্ড হচ্ছে গরমে। চতুর্থ রাউন্ড মাঠে গড়ানোর আগে বিসিবি চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীও খেলোয়াড়দের দিয়েছেন সতর্কবার্তা। প্রচুর পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন।
যতই সতর্কতার কথা বলা হোক, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এপ্রিল যে লংগার ভার্সন ক্রিকেটে জন্য কোনোভাবেই উপযুক্ত নয় সেটিই যেন বলে দিচ্ছিল ইস্ট জোনের অনুশীলনের দৃশ্যগুলো। দাবদাহ থেকে খেলোয়াড়দের সৃষ্টি হচ্ছে পানিশূন্যতা। আর পানিশূন্যতা থেকে টান পড়ছে মাংসপেশিতে, চিকিৎসাবিদ্যায় যেটিকে বলা হয় ‘ক্র্যাম্প’।
গত মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ গড়িয়েছিল এপ্রিলে। তাতে ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন অনেক ক্রিকেটার। এবার প্রিমিয়ার লিগের সময় এগিয়ে যাওয়ায় বিসিএলের সূচি হয়ে গেছে এলোমেলো। সারাবছরের ক্রিকেটের সূচি খুব যত্ন নিয়ে আগেভাগেই চূড়ান্ত করার সময় যে এসেছে, সেটিই বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে এসব পরিস্থিতি।
বিসিএলে চার দলের মধ্যে তিন দলের আছে শিরোপা জয়ের সুযোগ। তিন দলের মাঝে পয়েন্টের দূরত্ব মাত্র তিন। পঞ্চম রাউন্ড তাই তিনটি দলের শিরোপার কাছে যাওয়ার সুযোগও। সে পথে খেলোয়াড়দের সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ, মাঠে ভালো করার সঙ্গে গরম জয় করারও।