কম্পিউটারের কিবোর্ড-মাউস দিয়ে গেমিং করেও গড়া যায় ক্যারিয়ার, পৌঁছানো যায় আন্তর্জাতিক কোনো জায়গায়। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই গেম খেলছে একদল কিশোর-তরুণ, আবার কেউ খেলছে শখের বশে।
রাজধানীর খিলক্ষেতের আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মূল ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়েছে গেমিং ফেস্ট ২০১৮’র।
কম্পিউটার গেমের বৃহত্তম প্রতিযোগিতামূলক জাতীয় পর্যায়ের এই অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থী। এছাড়াও, বেশ কয়েকটি গেমার দল এসেছে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যারা সবাই বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
স্কলাসটিকার পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারহান রাহমান এসেছিলেন গেম ফেস্টে অংশ নিতে। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, মা মনে করে এই ধরনের একটি সার্টিফিকেট আমার পরবর্তী জীবনে কাজে আসবে। দেশে বা দেশের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এগুলো আমাকে সহায়তা করবে বলে মনে করেন তিনি। তার উৎসাহেই গেম ফেস্টে অংশ নিই। আমার বন্ধুরাও বলে আমি কিছু পারিনা, তাদের আমি জানিয়ে দিতে চাই যে আমি অনেককিছু পারি।
ভবিষ্যতে আরো ভালো ভালো কিছু গেম আসবে এবং প্রজেক্টর দিয়ে গেমিংয়ের ইচ্ছা এই ক্ষুদে গেমারের।
আরেক গেমার এআইইউবির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শেষ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী জহির রায়হান জানান ভালো কোনো সুযোগ মিললে গেম নিয়েই থাকতে চান।
মঙ্গলবার সকালে প্রতিযোগিতাটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. কারমেন জেড লামাগনা, ভাইস চেয়ারম্যান এবং অফিস অফ স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স এর ভাইস প্রেসিডেন্ট নাদিয়া আনোয়ার।
উদ্বোধন শেষে জেড লামাগনা বলেন, এটাই সবচেয়ে বড় গেমিং প্রতিযোগিতা। ৪৮০ জন অংশগ্রহণ করেছে এই আয়োজনে। মেইন ক্যাম্পাসে চলে আসার পরে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় আয়োজন। আর যোগ করার মতো বিষয় হচ্ছে এর আগেরবারের প্রতিযোগিতায় যারা অংশগ্রহণকারী ছিলো তারা এখন আমাদের শিক্ষার্থীও।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে প্রতিযোগীরা ভেন্যুতে প্রবেশ করতে শুরু করে। এসময় তাদের মাঝে এই প্রতিযোগিতার অফিসিয়াল টিশার্ট, আইডি কার্ড এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অভিজিৎ ভৌমিক বলেন, আমরা চাই ইউনিক কিছু আয়োজন করতে। তবে বেশিরভাগ আয়োজনই হয় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক। স্কুল কলেজ কাভার হয়না। তাহলে তারা কেন আমাদের বেছে নিবে সেই জায়গা থেকেই এত বড় পরিসরে আয়োজন। আমরা জাতীয় পর্যায়ে এক সপ্তাহের জন্য সবার উপযোগী গেমিং কার্নিভাল আয়োজন করতে চায় একসময়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সাইফ উল্লাহ মিয়া বলেন, গেমের ভিডিও ইউটিউবে দিয়ে অথবা লাইভ স্ট্রিমিং করে ক্যারিয়ার গড়া যায় আবার গেম ডিজাইন করাটাও এখন সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। এই ফেস্টটা সেই জায়গাটাতেই ছেলেমেয়েদের সচেতন করে তুলবে। ফেস্টে অংশ নিয়ে তারা চেষ্টা করবে গেমটা বুঝতে ও বুঝে স্বপ্ন দেখতে। তারা খেলে পরিকল্পনা করবে এমন কিছু আমরা বানাবো।
প্রথমদিন ফিফা-১৮ এবং এনএফএস মোস্ট ওয়ান্টেড গেমের ২টি করে রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়।
এই পুরো প্রতিযোগিতাটির আয়োজন এবং পরিচালনা করছে এআইইউবি কম্পিউটার ক্লাব (এসিসি)।
এসিসির জেনারেল সেক্রেটারি বি. এম. মোহাইমিনুল ইসলাম রাহুল বলেন, গেমিং দিয়ে যে ক্যারিয়ার গড়া যায় সেটা অনেকেই জানেনা। বেশিরভাগই শখের বশে খেলে। সেই জায়গাগুলোই আমরা বোঝাতে চেয়েছি। শখের বশে যারা খেলে তারা আবার গেম ডেভেলপমেন্টে অংশ নেয়। গেমাররা আন্তর্জাতিক কনটেস্টে অংশ নিয়ে আয় করতে পারে। সেসবই আমরা প্রমোট করতে চাই।
গেমিং ফেস্টের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৩ই এপ্রিল। যে কেউ চাইলে গেমিং ফেস্ট দেখতে আসতে পারেন। তবে সঙ্গে অবশ্যই একটি ফটো আইডি আনতে হবে।
প্রতিযোগিতা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন স্কুল কলেজের প্রতিযোগী এবং তাদের অভিভাবকদের মাঝে বেশ আগ্রহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।
ছবি: সাকিব রাইন।