বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশেও আঘাত হানে। এরপর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। অবস্থা মোকাবিলায় চরম সঙ্কটকালে ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেয় সরকার, খাত বিশেষে প্রণোদনাও দেয়। সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে না সহ নানা সুবিধা দেবার পরেও খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় ব্যাংক ঋণে শৃঙ্খলা আনতে সরকার কড়া নির্দেশনা জারি করেছে।
বুধবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, যেই খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে বা হবে ঠিক সেই খাতেই তা বিনিয়োগ করতে হবে। গ্রাহককে যে উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান করা হয়েছে বা হবে সে উদ্দেশ্যেই ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে পরামর্শ দেয়া হলো।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, কিস্তিভিত্তিক প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রে আগের কিস্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী কিস্তি ছাড় করতে হবে। কোনো ঋণের অর্থ মঞ্জুরীপত্রে বর্ণিত খাতের পরিবর্তে অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ করা হলে ঋণ বিতরণ করা ব্যাংককে তার কারণ উদঘাটন করতে হবে। একই সঙ্গে তা রোধ করতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি ঋণ বা বিনিয়োগের অর্থ দিয়ে কোনভাবেই অন্য কোনো ঋণ বা বিনিয়োগের দায় পরিশোধ বা সমন্বয় করা যাবে না। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
করোনাকালে বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় খেলাপি ঋণ বিষয়ে নানা সুযোগ-সুবিধার পরেও মার্চ-জুন এ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।
এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশের এই নির্দেশনা জারি করা আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে খুবই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। ব্যাংক ও গ্রাহকদের উপরে জারি করা এই নির্দেশনা কোনো ধরণের প্রভাব মুক্ত হয়ে যথাযথভাবে কার্যকর করা গেলে দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে থাকবে বলে আমাদের ধারণা। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার একান্ত মনোযোগ অবশ্য কাম্য।