গত ২০ বছরে যারা এক কোটি টাকার উপরের ঋণখেলাপি এবং যারা অর্থ পাচারকারী তাদের নাম পরিচয়সহ একটি প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এই প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।
দেশের ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে করা এক রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্টে বেঞ্চ আজ এবিষয়ে রুল জারিসহ বাংলাদেশের ব্যাংকের গভর্নরের প্রতি তিনটি নির্দেশনা দিয়েছেন।
গভর্নরের প্রতি দেয়া ৩ দফা নির্দেশনা হচ্ছেঃ –
১) এক কোটি টাকার উপরে ঋণখেলাপিদের নাম, ঠিকানা, তালিকা আদালতে দাখিল করতে হবে।
২) অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে কী কী ব্যবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
৩) ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম চলছে, তা বন্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
এই তিন দফা নির্দেশনা দিয়ে আদালত আজ বলেছেন, ‘দেশের সরকারি-বেসরকারী ব্যাংকিং খাতে অর্থনৈতিকভাবে একটি নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা উধাও হয়ে গেছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো সিকিউরিটি মানি নাই। যারা লোন নিচ্ছে তাদের ঠিকানায় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো চরম দূরাবস্থার মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতি খুব দ্রুত কাটিয়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
আদালত রুলে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে আর্থিক দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সিটি ব্যাংক এন এ বাংলাদেশের সাবেক সিইও মামুন রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থপাচার রোধে কেন কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দুই সচিব, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আজ আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এর আগে দেশের ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’র পক্ষ থেকে হাইকোর্টে এ রিট করা হয়।