শুরু করেছিলেন টেলিভিশন নাটকের অভিনেতা হিসেবে। নাটকে কাজ করে পরিচিতির পর ‘জীবনের গল্প’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন। পরে ‘এই যে দুনিয়া’, ‘গ্রাম গঞ্জের পিরীত’, ‘পাষাণের প্রেম’ ছবিগুলোতে কাজ করে জনপ্রিয়তা পান। তারপর আসেন নির্মাণে। ‘প্রার্থনা’ ছবি নির্মাণ করে পুরস্কৃত হয়েছেন, সম্প্রতি নির্মাণ করেন ‘অর্পিতা’ নামে আরেকটি ছবি।সব মাধ্যমে মোটামুটি পরিচিতি পাওয়ার পর উপস্থাপনা দিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হন তিনি। বারবার যার এত বিশেষণ দেয়া হচ্ছে তিনি শাহরিয়ার নাজিম জয়।
‘সেন্স অব হিউমার’ নামের একটি সেলেব্রেটি টক-শো জয়কে তুলে দিয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সঞ্চালনার আসনে বসে তিনি নাস্তানাবুদ করেছেন অতিথিদের, জর্জরিত করে ঘায়েল করেছেন প্রশ্নবাণে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে নতুন এক উপস্থপক ‘জয়’ এর। এনে দিয়েছে যশ, খ্যাতি ও আর্থিক স্বচ্ছলতা। অনুষ্ঠানটির পর জয়কে পাওয়া গেছে একাধিক টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায়। এমনকি তার নামেই হয়েছে বিভিন্ন শো। দেশের বড় বড় ইভেন্টের উপস্থাপনায়ও করেছেন তিনি।
শিল্পকলার নাট্যশালায় শিল্পী সংঘের উদ্যোগে গত বছর নভেম্বরে ‘পেশাদারিত্বের সংকটে দেশের টেলিভিশন নাটক ও অভিনয় শিল্প’ শীর্ষক আলোচনা সভায় জয় তার বক্তব্যে বলেছিলেন, আমি এখন বিকল্প পেশা (উপস্থাপনা) বেছে নিয়েছি। গত দুই বছরে সেই বিকল্প পেশা দিয়ে যা আয় করেছি তা সারা জীবন নাটক করে আয়ের চেয়ে দশগুণ বেশি।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) শাহরিয়ার নাজিম জয় কথা বলেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে।
আলাপকালে তিনি বলছিলেন, নিজে অনুভব করি উপস্থাপক হিসেবে আমার আলাদা পরিচিতি চলে এসেছে। যেটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শো। এর মাধ্যমে আমি শীর্ষে অবস্থান করছি। মানুষ বলে, উপস্থাপনায় আমি সুপারস্টার। আমার ওই লেভেলে ধরা হয়। বড় বড় কাজে এখন আমাকে ডাকা হয়। তাই আমি নতুন করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, আমার অভিনয়টাকে কামব্যাক করানো।
জয় বলেন, আমার ইচ্ছে আছে, উপস্থাপক হিসেবে যেভাবে সুপারস্টার হয়েছি, আমার মূল জায়গা অভিনয়টাও সেভাবে চাচ্ছি। একজন অভিনেতা কখনও গানের মডেল, বিজ্ঞাপনের মডেল, শর্টফিল্মে কাজ করবে, চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করবে। সে সবই করবে। ওই চিন্তা থেকে সম্প্রতি একটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করলাম। তিনি বলেন, নাটক, সিনেমায় যা কাজ করেছি সেগুলোর একটা আমল চলে গেছে। মানে ট্রেন্ড পরিবর্তন হয়েছে। কাজের ধরণও বদলে গেছে।
ইন্টারনেটকে আশীর্বাদ মনে করে জয় বলেন, ভালো কাজের জন্য এখন আর তথাকথিত প্রযোজক কিংবা প্লাটফর্মের জন্য বসে থাকা লাগে না। তিনি বলেন, টেলিভিশন নাটকের চেয়ে ইউটিউবের কাজ যেমন শর্টফিল্ম, ওয়েব সিরিজ, মিউজিক ভিডিও এগুলো অত্যন্ত চমৎকারভাবে নির্মিত হচ্ছে। কাজগুলো মানুষ দেখছে, সরাসরি মানুষ তাদের ফিডব্যাক জানাচ্ছে। এসব কাজগুলো ইন্ডিয়ান মার্কেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৈরি হচ্ছে। বাজেট, আয়োজন সবকিছুই উন্নতমানের। অনলাইনে নির্মাতা শিহাব শাহিন ‘দ্বিতীয় কৈশোর’ নামে একটি কাজ করলেন। আমি দেখেছি। মনে হয়েছে, এটা টেলিভিশনের যেকোনো নাটকের চেয়ে অনেক বেশি ভালো একটি কাজ।
শাহরিয়ার নাজিম জয় বলেন, ‘মিডিয়ার ট্রেন্ড আগের স্টাইলে নেই। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আগে পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিতাম। এখন সেটা অনলাইন কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সাথে সাথে লাখও মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে। আমি নিজেও এখন ইউটিউবে মনোযোগী। আমার চ্যানেলে ২ লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার। দেশের ১০০ চ্যানেলের মধ্যে আমারটা উৎকৃষ্ট চ্যানেল হিসেবে বিবেচ্য। দিন যত যাবে ইন্টারনেটের কাজের প্রতি মানুষ আরো ঝুঁকবে। আমার চ্যানেল থেকে এখন ‘সেন্স অব হিউমার’ প্রকাশ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, সাথে সাথে ওই চ্যানেল থেকে শর্টফিল্ম ও মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করবো। সব পরিকল্পনা করে ফেলেছি। ট্রেন্ডের সঙ্গে নতুন একটা যোগসাজশ হবে। ভিসিআর বিলুপ্ত হয়ে একসময় ভিসিডি/ডিভিডি এসেছিল। এখন সেটাও নেই। এগুলো হচ্ছে একটা ট্রাংজেকশন পিরিয়ড। ওই পিরিয়ডে পড়ে গিয়েছিলাম বলে আমার একটা দীর্ঘ বিরতি ছিল। শুধু আমি না, অনেকের ক্ষেত্রে এটা হয়েছে। ওই শূন্য সময়ে মোশাররফ করিম, অপূর্বরা ডমিনেট করে গেছে, এখনো করে যাচ্ছে। আমাদেরও এখন পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ নেই। আবার কাজ করবো।
সবশেষে জয় বলেন, চ্যানেল আইতে অনন্যা রুমা’র প্রযোজনায় ‘কিসের কথা’ নামে একটা বড় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছি। ‘ইত্যাদি’র পরে আমরাই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে এই কাজটা করতে যাচ্ছি। প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু করছি। এ অনুষ্ঠানের ফরিদুর রেজা সাগর ভাইয়ের সম্পূর্ণ ছায়া ও দোয়া আছে। কাজটি নিয়ে তিনি যথেষ্ট সজাগ। আমি নিজেও ব্যাপক আশাবাদী ‘কিসের কথা’ নিয়ে।