প্রথম প্রকাশিত বই কবিতার, ‘অন্য গাঙের গান, সমুদ্রসমান’ (২০১৬); তবে গল্প দিয়েই লেখালেখি শুরু করেছিলেন আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির। ‘বছরের দীর্ঘতম রাত’(২০১৯) তার প্রথম গল্পের বই। এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে লেখকের প্রথম উপন্যাস ‘গডেস অভ অ্যামনেশিয়া’। উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ১৯৮২ সাল থেকে ২০০৬, প্রমত্ত যমুনার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সংগ্রামী এক গ্রাম। পঁচিশ বছরে জীবন ও রাজনীতির অসংখ্য ঢেউ এসে বহুবার সেখানকার জীবনের বাঁক বদলে দেয়। সেইসব বাঁক বদলের জটিল গল্প সরল চোখে, সহজ ভাষায় বলেছেন লেখক।
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদিরের জন্ম সিরাজগঞ্জে। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। একই বিষয়ে পড়ান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখক তার কবিতা, গল্প, উপন্যাসের ভাষা, তার নিরীক্ষা প্রবণতা, লেখালেখি নিয়ে পরিকল্পনা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে:
আমরা মূলত ‘গডেস অভ অ্যামনেশিয়া ’ নিয়ে আলাপ করব। আলাপে ঢোকার আগে বরং আপনার আগের তিনটা বই নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। আমার এমন মনে হয়, নতুন বই এলে আমরা পুরোনো বইয়ের দিকে কিছুটা অবহেলা করে ফেলি।
নতুন বই যেহেতু অপরিচিত থাকে, তাকে পরিচয় করানোর দরকার পড়ে, এই জন্যই বোধহয়। আমার প্রথম বই কবিতার। অন্য গাঙের গান, সমুদ্রসমান বের হয়েছিল ২০১৬ সাল। বইটা এখন আর বাজারে নেই। এর তিন বছর পর বের হয় আমার একমাত্র গল্প সংকলন বছরের দীর্ঘতম রাত। এই বই নিয়ে আপনার সাথে আলাপ হয়েছিল। ২০২০ সালে এসে বের হয় যুদ্ধ যুদ্ধ রুদ্ধ দিন, আরেকটা কবিতার বই।
কবিতা দিয়ে শুরু করে, পরে গল্পের বই হয়ে উপন্যাসে। কেন? মানে প্রশ্ন অর্থে না, জার্নি অর্থেই ব্যাপারটা যদি বলেন…! আর ভালো কথা, উপন্যাসে এসে আপনি কাব্যধর্মী ভাষাটাও কিছুটা বর্জন করেছেন বলে মনে হয়েছে। যদিও শুরুটা কাব্যিক বটে…
আমার প্রথম বই কবিতার কিন্তু প্রথম প্রকাশিত লেখা একটা গল্প। তাই গল্পের বই প্রকাশের ইচ্ছা শুরু থেকেই ছিল, সুযোগ হয়ে ওঠে নাই। তবে উপন্যাস লেখার সাহস করতে সময় লেগেছে। মৌ আপুর (কথাসাহিত্যিক উম্মে ফারহানা) লৌহিত্যের ধারে নামের ফিকশন ধাঁচের স্মৃতিকথা পড়তে পড়তে একটা ধারাবাহিক বড় লেখার পোকা মাথায় ঢোকে। মঈন ভাইয়ের (কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক মঈন উদ্দিন) ইপ্রকাশে পনেরো দিন পরপর প্রকাশের তাগাদার কারণে প্রথম দুই বছর অর্ধেক লেখা হয়েছে। বাকি অংশ শেষ করতে আরও দুই বছর লেগেছে।
বছরের দীর্ঘতম রাতের গল্পগুলো থেকে গডেস অভ অ্যামনেশিয়ার ভাষা আলাদা হওয়ার কারণ এই উপন্যাসের ‘ন্যারেটর’ ও প্রধান চরিত্র, এ দুজন। তাদের দেখার চোখ আর কাহিনির বর্ণনার মধ্যে একটা সরল যোগাযোগ রাখতে চেয়েছি। এক ধরনের ‘ইনোসেন্স’ ধরে রাখার চেষ্টা বলতে পারেন। অনেক জটিল ঘটনাকেও ইচ্ছা করেই সরল চোখে, সহজ ভাষায় বলতে চেয়েছি।
‘গডেস অভ অ্যামনেশিয়ায়’ ‘ট্রানজিশন’ একটা বড় ফেনোমেনন হিসেবে এসেছে এবং সেটা অন্তত দুইটা লেয়ার থেকে। একটা প্রযুক্তি আরেকটা রাজনৈতিক-সামাজিক ক্ষমতা। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। বিদ্যুৎ আসা, রেডিও থেকে টিভি, ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ঢোকা… লাইফের এ চেঞ্জগুলো এবং রাজনীতিতে পুরুষ শাসকের আমল ধরে দুই নারী নেতার সময়ে ঢোকা… এ আইডিয়া নিয়ে যদি বলেন…
মূলত একটা বড় সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবর্তনকে কেন্দ্র করেই গল্প। কিন্তু আমার কাহিনির কেন্দ্র ঐতিহাসিক কেন্দ্রগুলো থেকে দূরের, প্রত্যন্ত বলতে পারেন। ‘ট্রানজিশন’ এর বিবরণও তাই ইচ্ছাকৃতভাবে ‘আনরিলায়েবল’। আপনি যদি ইতিহাস-সচেতন মন নিয়ে পড়তে বসেন হয়তো হতাশ হবেন। কিন্তু আমি চেয়েছি বড় পরিবর্তনগুলোর এমন একটা পাঠ হাজির করতে যেটা আপাতদৃষ্টিতে একেবারেই ‘আনক্রিটিকাল’ কিন্তু চাইলেই গভীরে ঢোকা সম্ভব। চাইলেই সহজ আলাপের তল থেকে জটিল-কঠিন বিষয়গুলো আবিষ্কার করা যাবে।
যে বড় ঘটনার কথা বলছি, তা এক ধরনের সাবলীল নারীবাদী বয়ানে হাজির করার চেষ্টা ছিল। বাংলাদেশে নারী নেত্রীদের প্রভাবশালী উত্থানের ঢেউ কিন্তু কম-বেশি সমাজের সব স্তরকেই দুলিয়ে দিয়েছিল। আমরা এখন হয়তো অভ্যস্ত হয়ে গেছি, কিন্তু শুরুর দিকে মানুষের অবাক না হয়ে উপায় ছিল না। দাদী চরিত্রটির ‘দুই নেত্রী’র প্রতি আগ্রহ, ভালোলাগা কিন্তু আসলে তার একার না, এটা ‘কালেকটিভ’। তত্ত্বের বাইরে গিয়ে সৃষ্টি হওয়া মোটামুটি ‘অসচেতন’ কিন্তু প্রচণ্ড ‘সুদূরপ্রসারী’ নারীবাদ।
সময়ের যে স্কেচ আপনার উপন্যাসে, সেখানে দেখা যায়, সেই সময়কে আপনি যতটা না সাল দিয়ে ধরতে চেয়েছেন, এর চেয়ে বেশি ধরতে চেয়েছেন সময়ের প্রবণতা দিয়ে, যাপন পদ্ধতি দিয়ে৷ ধরেন মা-বাবার সিনেমা হলে যাওয়া, সেই সময়ের বিনোদন, আচার ইত্যাদি… সাল-তারিখ না বলেও এগুলো দিয়ে সময়টা ধরতে পারা…
ব্যাপারটা নিয়ে আমি এখনও দ্বিধায় আছি। যখন আমরা যখন পিছন ফিরে দেখি, তখন সময়ের স্রোত নাকি ঘটনা প্রবাহ—কোনটা বেশি ভাবায় বা মুখ্য হয়ে ওঠে? এ উপন্যাসের বর্ণনাতে বারবার সাল-তারিখ ছাপিয়ে ‘কালচারাল রেফারেন্স’ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এটা লেখার, ভাবনার অন্যতম দুর্বলতাও হতে পারে।
কিছু পপুলার বাংলা গানও অনায়াসে উপন্যাসে এসেছে। আপনার তো এমনিতেই পপ কালচারের দিকে মনোযোগ আছে। আপনি কতটা পপ কালচারের ভোক্তা? উপন্যাসে এগুলো ব্যবহারের কারণ কী? মানুষের যাপনের সাথেও আপনি এর সম্পর্ক টানার চেষ্টা করছেন। নমুনা হিসেবে বলা যায়, সালমান শাহের মৃত্যুর সঙ্গে বাড়ির লোকেদের মন খারাপ করার ব্যাপারটা…
আমার মনে হয়, এই ক্ষেত্রে পপুলার কালচারের দিকে মনোযোগের চেয়েও গুরুরত্বপূর্ণ, স্মৃতিকাতরতা। শুনতে ‘ক্লিশে’ লাগলেও বিস্মরণের বিরুদ্ধে স্মরণের লড়াইয়ের অন্যতম হাতিয়ার এই সমস্ত গান, সিনেমা, গায়ক-গায়িকা বা ফিল্মস্টার। যেমন সালমান শাহ’র মৃত্যু ওই সময়ের অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় ঘটনা। তাই ১৯৯৬ সালকে মনে রাখতে চাইলে, ভুলে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে, কোনো কোনো সময় ওই রহস্যময় হত্যা বা আত্মহত্যার কাছে আমাদের ফিরতে হয়। একই দিনে ঘটেছে এমন একটা খুবই ব্যক্তিগত ঘটনা আর সমষ্টিগত শোককে অনেক সময় চাইলেও আলাদা করা যায় না।
আবার রুনা লায়লা বা জেমসের বাংলা, হিন্দি, উর্দু জনপ্রিয় গানগুলো যেমন পপ কালচারের প্রতিনিধিত্ব করে, একই সঙ্গে সেগুলো মানুষের বহু অনুভূতির প্রতীকী প্রকাশ। অনেকটা গানের কাঁধে বন্দুক রেখে নিজেকে তুলে ধরা বলতে পারেন। এটা কিন্তু আমরা করি। এভাবেই বোধহয় পপ কালচার আমাদের ঘিরে রাখে।
উপন্যাসটির কাহিনি এগিয়েছে ন্যারেটর, দাদী, গ্রাম ইত্যাদি কেন্দ্র করে। কিন্তু এখানে তো খুব বড় করেই দুই নেত্রী এসছেন। তাদের ভূমিকা, তাদের ইমপ্যাক্ট…। দুই নেত্রীর একটা ব্যক্তিত্ব দান করা হয়েছে উপন্যাসে, সেটা তো গ্রামের দিকে যে তাদের একটা প্রায় মিথসুলভ চরিত্র, সেটা। আবার ক্ষমতায় গিয়ে তাদের মুখ পরিবর্তন হচ্ছে। তাদের ক্ষমতার সঙ্গে উপন্যাসের চরিত্রের ক্ষমতায়িত হওয়ার একটা প্যারালাল বর্ণনা… এটা কেন?
দুই নেত্রী কিন্তু সবকিছুর পরেও ‘কালচারাল আইকন’, এখনও সবচেয়ে বড় ‘সেলিব্রেটি’। তাদের প্রবল ছায়া কয়েক দশকের উপর বিস্তৃত। যদিও গল্পে তাদের উল্লেখ অনেকটাই রেডিও, টিভির খবরের মতো, কিন্তু দাদী বা ন্যারেটরের জীবনে এ দূরবর্তী উপস্থিতি অনেকটা অনিবার্য।
এই যে নব্বই দশকের শুরুতে এত বড় পরিবর্তন ঘটল, প্রথম নারী শাসক পেল এ ভূখণ্ড এবং বিরোধী দলের নেতাও হলেন একজন নারী, এর প্রভাব কি শুধুই রাজধানী বা শহরগুলোতে সীমাবদ্ধ ছিল? নিশ্চয়ই প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কোনো না কোনো, যে মাত্রায়ই হোক, পরিবর্তন এসেছিল। এই দেশের নারীবাদকে ঐতিহাসিকভাবে পড়তে গেল, আমি বিশ্বাস করি, এ ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো বিরাট গুরুত্বের দাবিদার।
ঔপন্যাসিক হিসেবে আপনি তো নেত্রীদের প্রতি ক্রিটিকাল হন নাই। তাদের পজেটিভভাবেই শুধু দেখানো হয়েছে… সরল চরিত্রের ভেতর দিয়ে সরল মূল্যায়ন। এটা কি তাদের নানা খারাপ মুভগুলোকে আড়াল করে না?
ওই যে বললাম, ‘ইনোসেন্স’ ধরে রাখার চেষ্টা। সেটা হয়তো অনেক জরুরি বিষয়কে এড়িয়ে যায় বা আড়াল করে। কিন্তু ভালো-মন্দ যেমনই হোক, ‘ইনোসেন্স’ বা সহজ দৃষ্টিভঙ্গি হারিয়ে ফেলার সুদূরপ্রসারী একটা যন্ত্রণা আছে। আমি চেষ্টা করেছি সেই যন্ত্রণা লাভের আগের গল্প বলতে। অন্ধ অথচ রঙিন একটা আনন্দ পুনরাবিষ্কারের চেষ্টা। চোখ-কান খুলে রাখাটা অবশ্যই দরকারি কিন্তু অনেক সময় চোখ বন্ধ রেখে দেখতে, কান বন্ধ রেখে শুনতে আরাম লাগে। এটা কিন্তু নিছক ‘রোমান্টিসিজম’ না, বরং এক ধরনের ‘এস্কেপ ওয়ে’।
খুব বাস্তব জীবনেও প্রচুর ফ্যান্টাসি থাকে। রেডিও শোনা গ্রামের মানুষটা ভাবছেন, গান গাওয়া মানুষটাকে ‘রূপ’ দিচ্ছেন… সিনেমার মানুষেরা কেমন…ফ্যান্টাসিগুলো ধরার চেষ্টাটা নিয়ে যদি বলেন…
আমি আপনার সাথে একমত, অবশ্যই থাকে। ‘ফ্যান্টাসি’ ছাড়া কি বাস্তবতা হয়? আমাদের অনুভূতি বা আবেগের বর্ণনা কি ‘রিয়ালিস্টিক’ভাবে দেয়া সম্ভব? ধরেন প্রেমে মাতাল হওয়ার অভিজ্ঞতা, স্পর্শ বা যৌনতার ঘোর—এগুলো কতখানি বাস্তব কতখানি ফ্যান্টাসি, আমার ধারণা নির্দিষ্ট করে বলা অসম্ভব, দরকারও নেই।
গান শুনে, রেডিওতে নাম শুনে মুখের ছবি কল্পনা করে নেওয়া কিন্তু মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, অবচেতনেই ঘটে। আপনি চাইলেও কোন জায়গা বা মানুষের নাম শুনে চেহারা, দৃশ্য কল্পনা না করে থাকতে পারবেন না। এ ফ্যান্টাসিগুলো থামানোর শক্তি আমাদের নাই।
ফ্যান্টাসি গেলো, এই উপন্যাসে আপনার যে ব্যাপারটা আমার নোটেবল মনে হয়েছে, সেটা সাহিত্যের যৌন–নৈতিকতায় কিছুটা নাড়া দেওয়া। স্কুলের বালক-বালিকার প্রেম (দেখেন, আমি ‘বালক-বালিকা’ বলছি) দেখানো হলো, তাদের সেক্সের মতো ব্যাপারও আছে এখানে। এটা বড়জোর ‘কাফ লাভ’ হিসেবে দেখানো হতো! এমন কাজ কেমন করে করলেন?
ঠিকই আছে, বালক-বালিকা বলাই যায়। তাদের প্রেমের শুরু বা ব্যাপ্তী বলতে গেলে অপরিণত বয়সে। শারীরিক সম্পর্কটা তাই হয়তো আপনার বিশেষ করে নজরে পড়েছে। আর ওই সময়ের গ্রামীণ প্রেক্ষাপট বিচার করলে কিছুটা ‘দুরন্ত’, ‘অকালপক্ক’ বলতে পারেন। কিন্তু নৈতিকতার বিষয় সত্যি বলতে আমার মাথায়ই আসে নাই। মনে রাখা আর ভুলে যাওয়ার খেলার কাছে শরীর মন সমস্ত কিছুই যখন গৌণ হয়ে যায়, ‘যৌন-নৈতিকতা’, ‘সম্পর্কের বৈধতা’ ইত্যাদি আর প্রাসঙ্গিক থাকে না।
আপনার উপন্যাসে চরিত্রের নাম নেই। বড় লেখার ক্ষেত্রে এটা ঝামেলা লাগে না? পাঠকের জন্যও চাপের ব্যাপার হয়। পরে মনে রাখার জন্য। কুবের বা কুসুম যেমন। এটা কি বিস্মরণের দেবীকে ডেকে আনা না?
লিখতে গিয়ে কোন ঝামেলা হয় নাই। বরং নামের প্রয়োজনই পড়ে নাই। সম্পর্কের নাম, পেশাগত পরিচয় ইত্যাদি স্বতঃস্ফূর্ত বিকল্প হয়ে উঠেছিল লেখার সময়। কিন্তু পাঠকের পড়তে গিয়ে কী মনে হবে, আমি জানি না এখনো।
বিস্মরণের দেবীর জন্যে অবশ্য নাম না থাকাটা বিশেষ সুবিধার। ভুলতে পারাটাই যেহেতু তার আসল নেশা। কারও নাম না থাকলে প্রক্রিয়াটা আরও গতি পায়।
আপনার উপন্যাস নিয়ে যদি আপনার নিজেকে মূল্যায়ন করতে বলা হয়, কী বলবেন?
সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন। নিজে মূল্যায়ন করা মুশকিল। উপন্যাস প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর আমার নিজের মূল্যায়ন সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ও অপ্রয়োজনীয়।
উপন্যাসটা নিয়ে আলাপ আর না করাই ভালো। পাঠক পড়ে দেখুক। বরং অন্যদের নিয়ে কথা বলা যাক, সমসাময়িকদের মধ্যে কাদের কথাসাহিত্য পড়েন? পছন্দ করেন? কেন?
বড় ফিকশনের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে ইদানিং। সাম্প্রতিক মাহবুব মোর্শেদের তোমারে চিনি না আমি, মেহেদী উল্লাহর গোসলের পুকুরসমূহ, মঈন উদ্দিনের রসুন চাষের ঘটনাবলী পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। ছোটগল্প পড়া হয় প্রচুর। পছন্দের গল্পকার, গল্পের সংখ্যাও অনেক। তাই কারও নাম বললাম না।
আর সমসাময়িক না হলেও একটা বইয়ের কথা আমি বলতে চাই—সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অলীক মানুষ। উপন্যাসটা ২০২১ সালের শেষের কয়েক মাস প্রায় প্রতিদিন আমার মাথায় ঘুরছিল। এখনও চুপচাপ বসে এর চরিত্রগুলোকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে।
সামনের দিনের পরিকল্পনার কথা বলেন। লেখালেখি নিয়ে প্ল্যান কী?
বেশ কিছু গল্প গত দুই বছরে বিভিন্ন দৈনিকে বা অনলাইন ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছে। এক জায়গায় করলে একটা বই হবে। আগামী বছর প্রকাশের ইচ্ছা আছে। কবিতাও লেখা হচ্ছে মাঝেমধ্যে। তবে বেশি সময় দিচ্ছি নতুন উপন্যাসে। এখন পর্যন্ত তিনটা অধ্যায় লেখা হয়েছে। এবারও প্রথমে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের সম্ভাবনা বেশি। একটা প্লাটফর্মের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপও হয়ে আছে। দেখা যাক, শিগগির ঘোষণা দিতে পারব আশা করি।
উপন্যাস: গডেস অভ অ্যামনেশিয়া (২০২২) প্রকাশক: চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত
প্রকাশিত অন্যান্য বই: কবিতা: অন্য গাঙের গান, সমুদ্রসমান (২০১৬)। যুদ্ধ যুদ্ধ রুদ্ধ দিন (২০২০)।
গল্প: বছরের দীর্ঘতম রাত (২০১৯)