চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

উপকূলের সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল আজ

আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল, বাংলাদেশের উপকূলবাসীদের স্বজন হারানোর দিন। ১৯৯১ সালের এই দিনে এক মহা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা। ভয়াল ২৯ এপ্রিল উপকূলবাসীর বেদনার দিবস হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। এবছর পুরানো বেদনার সাথে যোগ হয়েছে মহামারি করোনা।

প্রতি বছর এ দিনটি পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান মালার আয়োজন থাকলে ও এবারে কোন কিছুই থাকছে না। স্বজন হারা মানুষগুলো বাড়িতে দোয়া ছাড়া কিছু করতে পারছে না। ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ২৯ বছর অতিবাহিত হলেও কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূলবাসী এখনো অরক্ষিত।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের দিবাগত মধ্যরাতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, রবগুনাসহ দেশের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে ১২ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় জ্বলোচ্ছাস নিয়ে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় গোর্কি।

এতে ২ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটার পাশাপাশি নিখোঁজ হয় আরও প্রায় ১ লাখ। ৭০ হাজার গবাদী পশু মারা যায়। ঐ রাতের তান্ডবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল বলে সরকারী হিসেবে রয়েছে। তবে বেসরকারী হিসেবে এ ক্ষতির পরিমান আরো বেশি হবে বলে জানালেন কোষ্টাল জার্নালিষ্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আতা উল্লাহ খাঁন।

গোর্কির ছোবলে বহু পরিবার স্বজন হারা হয়। এখনও সেই ভয়াল রাতের স্মৃতিতে উপকূলবাসী আঁতকে উঠেন। সে প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ের ২৯ বছর অতিবাহিত হলেও কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূলবাসী এখনো অরক্ষিত, তার সাথে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এখনো বিভিন্ন স্থানে খোলা রয়েছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। ফলে বিভিন্ন উপকূলীয় লোকালয়ে সাগরের লোনাজল এখনো প্রবেশ করছে।

কক্সবাজারের মহেশখালীর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ শরিফ বাদশা বলেন, গত ২৪ বছর ধরে তার এলাকায় ৮ কিলোমিটার বেড়িঁবাধ খোলা রয়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার গোস্মামী জানান, কক্সবাজারের ৫৯৬ কিলোমিটার বেড়ি বাধেঁর মধ্যে ৮ শ’ মিটার এখনো খোলা। ঝুকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৭৩০ মিটার। তবে ১১টি পয়েন্ট দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে ও জানান তিনি।

উপকূলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট হবার পাশাপাশি এখন করোনা ভাইরাসের কারনে উপকূলের জেলে, লবন চাষী ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো চরম বিপাকে রয়েছে বলে জানিয়েছে উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী।

১৯৯১ সালের ওই দিনে সবচেয়ে বেশী প্রাণহানি ঘটে কক্সবাজারের মহেশখালীর ধলঘাটা উপ-দ্বীপে। এ ইউনিয়নের সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য কামরুন নাহার রুবি জানান, এখানে এমন কোন বাড়ি বা ঘর নেই যে বাড়ি থেকে ৫/৬ জন লোক মারা যায়নি। তাই এ দিনটি এলে এখনো প্রতিটি বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। ধলঘাটা তরুন ছাত্র সংঘের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান,১৯৯১ সালের পর থেকে ধলঘাটা এলাকার বেড়ীবাঁধ এখনো খোলা রয়েছে।

কুতুবদিয়া দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ নয়ন ওই রাতের স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, সে ভয়াল রাতের কথা মনে পড়লে চোঁখ এখনো ঝাপসা হয়ে আসে। সে রাতের কথা কোনভাবেই ভুলে যাওয়ার নয়। তবে উপকূল এখনো অরক্ষিত।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন,‘সরকার কক্সবাজারের উপকূলকে রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উপকূলবাসীর বাসীর একটাই দাবি তা হলো, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে যেন দেশের উপকূলকে সাগরের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করা হয়’।

বেদনার এ দিনটি পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবছর দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করে থাকলে এবছর দেশে করোনা সংকটের কারণে এবারে শুধু মসজিদ মন্দির ও গীর্জায় সীমিত আকারে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন,করোনার কারণে এবছর এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।