প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে সরকার। এই বিনিয়োগের জন্য একটি তহবিল গঠন এবং সেই তহবিল থেকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পায়রা কর্তৃপক্ষকে ঋণ প্রদান করা হবে।
এছাড়া সম্প্রতি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগের নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। এ অর্থ বহুমুখী বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আরও বেশি পরিমাণে জাপানি বন্ড কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য বন্ড কেনার কোটার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে ২ হাজার কোটি ইয়েন বা প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বন্ড কিনতে পারত। নীতিমালা শিথিল করার পর এখন কিনতে পারবে ৫ হাজার কোটি ইয়েন বা ৪ হাজার কোটি টাকার বন্ড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ (২৪ ফেব্রুয়ারি) হিসেব অনুসারে দেশে রিজার্ভ ৪ হাজার ৪০২ কোটি ডলার। যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আছে সেটি দিয়ে ১১ মাসেরও বেশি আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।
করোনাকালে বিদেশে থাকা বাংলাদেশীরা দেশে ফেরা এবং তাদের অনেকে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যসহ সঞ্চিত টাকা দেশে নিয়ে আসায় রিজার্ভ বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এছাড়া করোনার কারণে সরকারি বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের চাপ না থাকায় রিজার্ভের এই স্থিতি। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে বিনিয়োগ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদেরকে নিজের পায়ে চলতে হবে। নিজেদের অর্থায়নে কাজ করতে হবে। আমরা আমাদের দেশকে উন্নত করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কাজ করার দরকার আছে।’ তবে এই বিনিয়োগের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের অনেক অর্থনীতিবিদ। কোন রাজনৈতিক বা পারিপার্শ্বিক অবস্থার চাপে নয়, রির্জাভ থেকে নেয়া ঋণ যেনো অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিবেচনায় ব্যবহার করা হয় , সে বিষয়ে সর্তক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘এই ঋণ উদ্যোক্তাদের দিতে হলে বৈদেশিক মুদ্রা পরিচালনার নিয়ম-নীতি মেনেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারিতে রাখতে হবে। জানান , ঋণের অর্থ পরিশোধের সময়ও টাকায় নয় বরং হতে হবে বৈদেশিক মুদ্রাতেই।’ বিষয়টি নিশ্চয় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার খেয়াল করছেন।
দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পিত ব্যয়ের পরিমাণ ও তার ব্যবহার বিষয়ে নানা নেতিবাচক পরিসংখ্যান ও খবর আমরা দেখে আসছি বহুবছর হলো। দুর্নীতি ও অপচয়ের ইতিহাসও রয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এইসব কারণে দেশের মূল্যবান ওই রিজার্ভের সঠিক ও সতর্ক ব্যবহার একান্ত কাম্য। আমাদের আশাবাদ, সংশ্লিষ্ট সবাই এ বিষয়ে যত্নবান হবেন।