যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের পরিচালিত একটি জরিপ বলছে দেশ এখন উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে বলেই দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক দু:খটাকে ঠিক বড় করে দেখছে না। গণতন্ত্রে সমস্যা থাকলেও বর্তমান পদ্ধতি যেকোনো ধরনের সরকারের চেয়ে ভালো বলেই মনে করছে বেশিরভাগ জনগণ।
গণতন্ত্র আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা একটি আরেকটির পরিপূরক। তাই উন্নয়নের গতিধারায় গণতন্ত্রের কথা ভুললে চলবে না। এমনটিই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অন্যের পরিপূরক। কিন্তু একটি দেশের জনগণ যখন দেখে যে তার নিজের খাবারে কোনো সমস্যা নেই, সে ভালো চাকরি করছে এবং চাকরি থেকে ভালো আয়ও করছে তখন অন্যকিছু নিয়ে সে আর বেশি ভাবে না। গণতন্ত্র, নির্বাচন তখন আর তার মাথাব্যথার কারণ হয় না। কিন্তু দেশ ঠিক রাখতে হলে উন্নয়নের পাশেই হাত ধরাধরি করে চলতে হবে গণতন্ত্রকে।
এমনিতে হয়তো অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন সম্ভব, কিন্তু যদি গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকে তাহলে সেটা কখনোই সাসটেইনেবল মানে স্থায়ী হবে না। তাই দেশে স্থায়ী উন্নয়ন আনতে হলে গণতন্ত্রের চর্চা থাকাটা আবশ্যক। উন্নয়ন দেশের জন্য আবশ্যক কিন্তু উন্নয়নকে চোখে চোখে রাখার কাজটাই করবে গলতন্ত্র। সেটার চর্চা থাকাটা তাই জরুরি। গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে যেমন উন্নয়ন সম্ভব না তেমন উন্নয়ন ছাড়া গণতন্ত্রও সম্ভব না।
অবশ্য তার এমন মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. অরুণ কুমার গোস্বামী। তিনি বলেন, মূল ব্যাপারটা হলো দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা কিভাবে বিষয়টাকে দেখছি তার উপরই সবটা নির্ভর করে। দেশের মানুষ কিন্তু সবসময় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যানজট নিরসন, নিরাপত্তা এসব মানুষ সবসময় চায়। এসব নিশ্চিত হলে অন্যগুলো নিয়ে ভাবনা-চিন্তার পরিমাণ কমে আসে। অবকাঠামো ও ব্যক্তিগত উন্নয়ন পেতে গিয়ে অন্য কিছু চাপা পড়ে যেতেই পারে।
এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরো যোগ করেন, আগে যেটা বুঝতে হবে সেটা হলো, পলিটিকাল অর্ডার। সেটা ঠিকঠাক চলছে কিনা? মানে সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেসব ঠিকঠাক বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ দুই দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলেন। এই সময়ে তিনি দেশকে একটি ব্যাপক উন্নয়নের ধারায় নিয়ে গেছেন। কয়েকগুণ বৃদ্ধি দেশটির জনগণের মাথাপিছু আয়। অবকাঠামো বা অন্যান্য উন্নয়নতো রয়েছেই। তাকে কিন্তু কেউ স্বৈরশাসক বলছে না। দেশের উন্নয়নের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে রাজনৈতিক অর্ডার বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকবে।
সহিংসতা কোনো গণতন্ত্র হতে পারে না। সহিংসতা যারা করে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার মানে কিন্তু গণতন্ত্র নষ্ট হওয়া নয় বলেই মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
আইআরআইয়ের সেই গবেষণাপত্রে দেখা যায়, ২০১৫ সালের জুনে করা একটি জরিপে ৬৮ শতাংশ মানুষ গণতন্ত্রকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন। এবছরে তা কমে ৫১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। গত জরিপে উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন ২৭ শতাংশ, এবার ৪৫ শতাংশ উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
যদিও ৮৮ শতাংশ মনে করেন, গণতন্ত্রে সমস্যা থাকলেও বর্তমান পদ্ধতি যেকোনো ধরনের সরকারের চেয়ে ভালো।
‘অপটিমিজম গ্রোয়িং ফর বাংলাদেশেস ইকোনমিক ফিউচার’ শিরোনামে গত মঙ্গলবার আইআরআই এ জরিপের ফলাফলটি প্রকাশ করেছে।