উত্তর মেরুতে সর্ববৃহৎ অভিযানে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের গবেষক মল্লিক সেজান। এ অভিযান ২০ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে।
জার্মান গবেষণা জাহাজ পোলারস্টার্ন যা বিশেষভাবে তৈরি মেরু অঞ্চলের বরফ ভেঙ্গে সামনে যাওয়ার জন্য, নরওয়ের ট্রমসো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করবে উত্তর মহাসাগরের উদ্দেশে। তাদের লক্ষ্য হলো উত্তর গোলার্ধের কাছে সাইবেরিয়ান জলসীমাতে বরফের সাথে নোঙ্গর করা। আগামী এক বছর এই জাহাজ বরফের সাথেই আটকে থাকবে।
১৯টি দেশের গবেষকরা একত্রিত হয়ে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই অভিযান শুরু করেছে উত্তর মেরুর উদ্দেশে। এই আন্তর্জাতিক উত্তর মেরু অভিযানের নামকরণ করা হয়েছে মোজাইক (MOSAiC – the Multidisciplinary drifting Observatory for the Study of Arctic Climate)। গবেষকরা এক বছরেরও বেশি সময়কালীন এই অভিযান জলবায়ু সম্পর্কিত যে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করবে তা আমাদের জ্ঞানের পরিসীমাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিবে।
মেরু অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব গবেষণা করে আগামীতে সমগ্র পৃথিবীতে কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা সহজেই অনুমান করা যাবে। এই অভিযানটি পরিচালনা করছে জার্মানের আলফ্রেড অওেগার ইন্সিটিউট। এই অভিযানটি পৃথিবীর ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
এই অভিযানের প্রধান জাহাজ পোলারস্টার্নকে সাহায্য করবে চায়না, সুইডেন এবং রাশিয়ার ৫টি আধুনিক জাহাজ। সেইসঙ্গে হেলিকপ্টার এবং জার্মান বিমান গবেষকদের বিভিন্ন সময়ে আনা নেয়া ও তথ্য সংগ্রহে সাহায্য করবে। সমুদ্র পৃষ্ঠের ৩৫০০০ মিটার উপর এবং ৪০০০০ মিটার নিচ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। গবেষকদের মেরু ভাল্লুক থেকে রক্ষা করার জন্য সার্বক্ষণিক ৬ জন প্রহরি নিয়োগ থাকবে।
৩৯০ দিনের এই অভিযানের ১৫০ দিন থাকবে ২৪ ঘন্টা রাত যখন তাপমাত্রা মাইনাস পয়তাল্লিশ পর্যন্ত নামতে পারে। জরুরি যাতায়াতের জন্য বরফের উপর ১১০০ মিটার লম্বা রানওয়ে তৈরি করা হবে। এই অভিযান পরিচালনার খরচ ধার্য করা হয়েছে ২২২,০০০ মার্কিন ডলার। এর সাথে রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং গবেষকদের জাহাজে থাকার খরচ। একজন গবেষককে এক রাত্রি জাহাজে থাকার জন্য দিতে হবে ১৬৬০ মার্কিন ডলার। এই অভিযানের সর্বমোট খরচ ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কানাডা থেকে ৩ জন গবেষক এই অভিযানে অংশ নিচ্ছেন, যাদের মধ্যে এক জন বাংলাদেশি। কানাডার ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের পিএইচডি গবেষক বাংলাদেশের মল্লিক সেজান মাহমুদ এই মেরু অভিযানের ৬১ দিন পোলারস্টার্ন জাহাজে অবস্থান করবেন।
মল্লিক সেজান মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক যিনি বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার জন্য কানাডাতে অবস্থান করছেন। তিনি তার গবেষণার জন্য কানাডা সরকারের সবচেয়ে সম্মানিত ভ্যেনিয়ার গবেষকের মর্যাদা অর্জন করেছেন।