দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যার পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে নদী ভাঙনের কবলে পড়ার পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি, বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটসহ নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
টাঙ্গাইল
উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণের ফলে গেল ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনার অর্ধশতাধিক চরাঞ্চলসহ টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও বাসাইল উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন গ্রাম বন্যার কবলে পড়ছে। সেই সাথে বিভিন্ন এোকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের ফলে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও বাসাইলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের শতাধিক বসতভিটা, মসজিদ, বাঁধসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও পানি বৃদ্ধির ফলে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে যমুনার শাখা নদী ধলেশ্বরী, লৌহজং, বংশাই ও ঝিনাই নদীর পানি।
নদী তীরবর্তী এলাকায় ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় অনেকেই গবাদিপশুসহ উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছে। বসতভিটায় পানি উঠায় বন্যা দুর্গতরা বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটের মধ্যে পড়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি কোন সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ বানবাসিদের। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে আমনের ক্ষতি হবার শঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
কুড়িগ্রাম
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে।
কুড়িগ্রামে সেতু পয়েন্টে ধরলা ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি সামান্য কমলেও এখনও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানিও সামান্য কমেছে। পানিতে ডুবে গেছে নদী তীরের নিচু এলাকার ১০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ও ৮৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা, যমুনা ও ঘাঘট নদীর পানিও বেড়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের রোপা আমন ও পাটসহ নিম্নাঞ্চলের ফসল ডুবে গেছে। পানি বাড়ার এ অবস্থা আরও কয়েকদিন থাকবে বলে জানিয়েছে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সিরাজগঞ্জ
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বাড়ছেই। একই সাথে বাড়ছে তীরবর্তী এলাকার নদী ভাঙ্গন। ভাঙ্গন ও পানি বৃদ্ধির ফলে অবনতি হচ্ছে জেলার বন্যা পরিস্থিতির।
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে রোববার সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাধ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টেও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা নদীর পানি।
পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে যমুনা নদীর তীরবর্তী জেলার চৌহালী ও এনায়েতপুরের বেশ কয়েকটি স্থানে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। একদিনের ভাঙ্গনে চৌহালী উপজেলার খাসপুকুরিয়া থেকে বাগুটিয়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটারব্যাপি এলাকার বিনানই, চরসলিমাবাদ ও এনায়েতপুরের ব্রাক্ষণগ্রামের অন্তত ২০টি বসতভিটাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন ক্ষেত ও বীজতলা, আখ, পাট, তিল ও সবজিবাগানসহ বিভিন্ন ফসল।