চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

উত্তরবঙ্গের প্রথম সিনেপ্লেক্স হচ্ছে বগুড়ায়, ঈদে চালু

পুরাতন মধুবন সিনেমা হল ভেঙে চালু হচ্ছে ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’…

রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহরের বাইরে দেশে আর কোথাও অত্যাধুনিক সাজসজ্জা ও সুবিধা সংবলিত সিনে-থিয়েটার নেই। চারদিকে যখন সিনেমা হল বন্ধের খবর পাওয়া যাচ্ছে, তখন জানা গেল ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে উত্তরবঙ্গের অন্যতম জেলা বগুড়াতে প্রথম সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হচ্ছে।

শহরের পৌরসভা এলাকার চেলোপাড়া নামক স্থানে নির্মাণাধীন এই সিনেপ্লেক্সের নাম দেয়া হয়েছে ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’।

এর স্বত্বাধিকারী রোকনুজ্জামান ইউনূস (রুবেল) ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’ নিয়ে কথা বলেন চ্যানেল আই অনলাইনের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ প্রদর্শনের পর ‘মধুবন সিনেমা হল’ বন্ধ করে দেন। তারপর থেকে আধুনিক মাল্টিপ্লেক্সে রূপান্তরের কাজ শুরু করেন। গতবছর টানা কাজ হয়েছে। একটি স্ক্রিনে বানানো সিনেপ্লেক্স। যেটি আসন্ন ঈদে চালুর লক্ষ্যে বর্তমানে টানা কাজ চলছে। এখানে আসন সংখ্যা থাকবে ৩৫০ টির বেশি।

দিনমজুর শ্রেণির দর্শকদের জন্য ৮০-১০০ টাকা, শিক্ষার্থীদের জন্য ১৫০ টাকা এবং একেবারে উন্নতমানের আসনে ৩০০ টাকার টিকেট নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মধুবন সিনেপ্লেক্সে থাকবে নিজস্ব মেশিন ও ই-টিকেটিং ব্যবস্থা। সঙ্গে সঙ্গে একযোগে হলিউডের ছবিও প্রদর্শন করতে চান রোকনুজ্জামান ইউনূস (রুবেল)। তার মতে, বগুড়ায় প্রচুর হলিউডের ছবির দর্শক আছে। দেশের ছবির পাশাপাশি হলিউডের ছবিও আমরা চালানোর পরিকল্পনা করছি।


১৯৬৯ সালে রোকনুজ্জামান ইউনূসের পিতা মরহুম অবসরপ্রাপ্ত লেঃ কর্ণেল এ এম ইউনুস ‘মধুবন সিনেমা হল’-এর ভিত্তি স্থাপন করেন। পরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আর কাজ করতে পারেননি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৪ সালে তার পিতা চালু করেন ‘মধুবন সিনেমা হল’। রোকনুজ্জামান ইউনূসের পিতা মারা যাওয়ার পর তিনি নিজেই সিনেমা হলটির দায়িত্ব নেন। ৮০, ৯০-এর দশকে রমরমা ব্যবসা করেন হল থেকে। তারপর নানা কারণে মানুষ হল বিমুখ হতে শুরু করেন।

এরপর ২০১৫ সালে শাকিব খানের ‘লাভ ম্যারেজ’ ছবি প্রদর্শনের সময় রোকনুজ্জামান ইউনূস প্রথম টের পান সিনেমা হলের দর্শক এখনও আছে। তা না হলে ভাঙা চেয়ার, ছারপোকার কামড়, গরমের মধ্যেও দর্শক কেন আসছে হলে? পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে ‘আয়নাবাজি’ প্রদর্শনের সময় রোকনুজ্জামান ইউনূস নিজে নিজে লজ্জিত হন। কারণ নোংরা পরিবেশ, ভাঙা চেয়ার, গরমের মধ্যেও যে পরিমাণে দর্শক হলে আসছে তিনি কল্পনাও করেননি। বিশেষ করে শিক্ষিত শ্রেণির দর্শক তিনি বেশি দেখতে পান।

এও খেয়াল করেন, অফিস শেষ করে মানুষ পরিবার নিয়ে ‘আয়নাবাজি’ দেখতে আসছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, শহরের শিক্ষিত ছেলেরাও হলে আসতো। আমি তখন থেকে রিসার্চ শুরু করি। সেসময় দর্শক বলেছিল তারা ছবি দেখতে হলে আসতে চায়। কিন্তু পরিবেশন ভালো না বলে আসে না। মধুবন বন্ধের আগে সেখানে ‘শিকারী’, ‘নবাব’ ছবিগুলো হাই রেন্টালে নিয়েও লাভবান হয়েছেন রোকনুজ্জামান ইউনূস। তার ভাষায়, ‘শাকিব খানের নতুন ছবি এলেই দর্শক জায়গা দেওয়া যায় না। শিকারী, নবাব খুব ভালো ব্যবসা করেছিল। এছাড়া ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির সময়ও দর্শকদের জায়গা দিতে হিমসিম খেতে হতো। এমনকি রাতের শোতেও হাউজফুল ছিল।

রোকনুজ্জামান ইউনূস বলেন, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ চালানোর পর আমি সবার কাছে মাফ চেয়েছি সিনেমা হলের পরিবেশের কারণে। তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম একটি আধুনিক সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করবো। আমি আমার কথা রেখেছি। উচ্চশ্রেণীর দর্শকদের জন্য চায়না থেকে ২০০ উন্নত চেয়ার এনেছি, সোফা নিয়ে এসেছি ১৬ জোড়া, স্যান্ডার্ড ক্লাসের জন্য ১২৫ টি চেয়ার নিয়ে এসেছি। বর্তমানে ভেতরের সাজসজ্জার কাজ শেষ। চেয়ার বসানোর কাজ চলছে। বাকি আছে শুধু সিনেপ্লেক্সের বাইরের কারুকার্য। এগুলো রোজার আগেই শেষ করে ফেলবো।

রোকনুজ্জামান ইউনূস বলেন, ইতোমধ্যেই ৮০ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সিনেপ্লেক্স নির্মাণের পর যদি ব্যবসা ভালো হয় তবে পাশে জায়গা খালি আছে আরও দুটো সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করবো, সমস্যা হবে না। আগে একটি দিয়ে পরীক্ষা করে দেখি মানুষ হলে আসে কিনা! মধুবন সিনেপ্লেক্সের নিচতলায় থাকছে ফুডকোর্ট এবং উপর তলায় আধুনিক সিনে থিয়েটার। আর বাইরে থাকবে যানবাহন পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা।

তিনি বলেন, রোজার আগে তথ্যমন্ত্রী মহোয়দকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’-এর শুভ উদ্বোধন করবো। আর ঈদ থেকে শাকিব খানের ‘পাসওয়ার্ড’ ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমেই উত্তরবঙ্গের প্রথম মাল্টিপ্লেক্সের যাত্রা শুরু করতে চাই।