সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার খুটিগাছা গ্রাম। এই গ্রামে এমন সকাল আর আসেনি। সকাল থেকেই শিশু-কিশোর ভিড় জমাচ্ছে খুটিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। গৃহিনী সারাদিনের কাজগুলো গুছিয়ে রাখছেন সকাল সকাল। কান পেতে রাখছেন কখন মাইকে ঘোষণা আসে। পুরুষরাও কৃষি কাজ রেখে ছুটেছেন মাঠের দিকে। ব্যান্ড-বাদ্যের শব্দ আসছে সেখান থেকে। ভাইয়ের হাত ধরে ছোট বোন ছুটে যাচ্ছে। ছোট শিশুটিকে কাঁধে নিয়ে বাবা দৌড়ে যাচ্ছেন। কোন উৎসবে মেতেছে পুরো গ্রাম? কী সেই আবহ?
কৃষক সাদেক তার ক্ষেত থেকে শসা আর খিরা নিয়ে চলে এসেছেন বিদ্যালয় মাঠে। মফিজ পিঠা, পেয়াজু আর আলুর পুরির দোকান নিয়ে বসেছেন। হীরা এসেছেন বুট-বাদামের দোকান নিয়ে। মনির নিয়ে বসেছেন বাতাসা আর কোরমার দোকান। বিদ্যালয় মাঠে বসেছে আনন্দমেলা। শাইখ সিরাজ আসছেন এই মাঠে! হবে কৃষকের ঈদ আনন্দ!
যারা খেলায় অংশ নেবেন, তারা তিনদিন ধরে খেলার প্র্যাকটিস ও হিট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সকাল থেকেই শেষ প্রস্তুতি চলছে। যারা চাড়ি বাইচে অংশ নেবেন পুকুরে চলছে তার অনুশীলন। একজন চেষ্টা করে চলেছেন কলাগাছে বেয়ে উঠার। পুরস্কারটা নিতেই হবে!
খুটিগাছা গ্রামের মানুষগুলোর মাঝে উৎসব উৎসব আমেজ। গভীর এক স্ফূর্তি তাদেরকে যেন নিবিড়ে এক করে দিয়েছে, দলাবেঁধে নিয়েছে। উৎসবতো এমনই, মানুষের মনে মনে বন্ধন রচনা করে দেয়। একই সুর, একই গীত মনের ভেতর আলোড়িত হয়। খুটিগাছা গ্রামের মানুষগুলোও তাই। ভেতরে উৎসবের গভীর সংগীত নিয়ে অপেক্ষায় আছে।
সকালের সূর্য তখন পুবাকাশে। সোনারঙ ঢেলে দিচ্ছে ধরণীতে। গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা এসে জড়ো হচ্ছেন মাঠে। হ্যাঁ, অপেক্ষার পালা শেষ। ঐ যে মাঠের দিকে আসছেন শাইখ সিরাজ। সেই সবুজাভ শার্ট পরা সাদাসিধে মানুষ, কৃষকের বন্ধু প্রবেশ করেছেন মাঠে। কৃষকরা দৌড়ে গেলেন। তাঁকে বুকে জড়ালেন। কৃষকের কণ্ঠ শাইখ সিরাজও তাদেরকে বুকে টেনে নিলেন।
শুরু হলো কৃষকের ঈদ আনন্দের খেলাধুলা। সাথে খুটিগাছা ও তার আশেপাশের গ্রামের লোকজন। হৈ হৈ রৈ রৈ অবস্থা। হাজার হাজার মানুষ মেতে উঠেছে নির্মল এক আনন্দ উৎসবে। একের পর এক খেলায় তুমুল উৎসাহ দিয়ে গেছেন তারা। রোদ, তাপ উপেক্ষা করে গভীর আনন্দে ডুবে ছিলেন তারা। বালিশ লড়াই, তৈলাক্ত কলাগাছে ওঠা, পাওয়ার টিলার রেসের পাশাপাশি মামা-ভাগ্নের অবাক দৌড়, বর সাজবে বৌয়ের হাতে, চাড়ি বাইচ, বল গড়িয়ে কোথায় যায় দৌড়ে ধরি তিনজনায় নামের বিচিত্রসব খেলায় মশগুল ছিলেন সারাক্ষণ।
কৃষকের ঈদ আনন্দের উচ্ছ্বসিত দর্শক। খেলা শেষে বাড়ি ফেরার পালা। খুটিগাছার নুরুন্নবীর বয়স প্রায় আশি। এই বয়সেও তিনি পুরোটা সময় মাঠে ছিলেন। বললেন, এমন আনন্দ তিনি আর কখনও পাননি। জীবনের এই দিনের স্মৃতি তাঁর হৃদয়ে গেঁথে থাকবে আমৃত্যু।
শাইখ সিরাজের পরিকল্পনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় কৃষকের ঈদ আনন্দ প্রচারিত হবে ঈদের পরদিন (১৭ জুন) বিকাল সাড়ে চারটায়। চ্যানেল আইতে।